বোয়ালিয়া বিদ্যুৎ অফিসের যত্রতত্র এসি-র অনুমতি ও বেনিয়ম গ্রিল কারখানার ফলে গড়িয়া স্টেশনে লো ভল্টেজের জেরে মানুষের ভোগান্তি
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ১৫ই জুলাই ২০১৯ : রাজ্যে যেখানে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে গত ৮ বছর ধরে বিদ্যুৎ সংযোগ নিয়ে বেশ উল্লেখজনক উন্নতি হয়েছে, যখানে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী রাজ্যের প্রতিটা বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার প্রচাষ্টা চলছে। এই রাজ্যে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদন চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি এবং সেই কারণে এই রাজ্যের বাড়তি বিদ্যুৎ পাশের রাজ্যকে বিক্রি পর্যন্ত করতে হচ্ছে তবুও বিদ্যুতের হার কমছে না। সাধারণ মানুষকে ভারতবর্ষের মধ্যে সব থেকে বেশি হারে বিদ্যুৎ পরিষেবা নিতে হচ্ছে। এত কিছুর পরও রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের অন্তর্ভুক্ত বেশ কিছু জেলায় বিদ্যুৎ পরিষেবার কথা বলার মত নয়। তবে রাজ্যের মধ্যে বলা যেতে পারে সব থেকে নিকৃষ্ট ধরনের পরিষেবা সোনারপুর অঞ্চলের গঙ্গাজোয়াড়া সাব স্টেশনের।যদিও বর্তমানে রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদের হাতে আর বিদ্যুতের কোন দায়িত্ব নেই, এখন জেলায় বিদ্যুৎ পরিষেবার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ডিসিএল সংস্থাকে, যার পুরো নাম হল ওয়েস্ট বেঙ্গল ইলেকট্রিসিটি ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। এটি একটি রাজ্য সরকার আন্ডারটেকিং সংস্থা। সম্পূর্ণ রাজ্য সরকারের না হলেও রাজ্য সরকারের নজরদারি থাকবে এই সংস্থার উপর। কিন্তু আমি যদি শুধুমাত্র একটা অঞ্চলের কথা বলি তবে বোধহয় সারা রাজ্যের চিত্রটা তুলে ধরা যাবে। সোনারপুর অঞ্চলের গড়িয়া স্টেশন এলাকায় বোয়ালিয়া ইলেকট্রিক অফিসের অধীনে যে এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় তার অবস্থা এতটা করুণ যে এই প্রচন্ড গরমে বাসিন্দাদের হাঁসফাঁস অবস্থা। বোয়ালিয়া ইলেকট্রিক অফিস ধার্য টাকার বিনিময়ে যত্রতত্র এয়ার কন্ডিশনের অনুমতি দিয়ে দিচ্ছে।তারা দেখার প্রয়োজন মনে করছে না যে সেই এলাকায় কতটা বিদ্যুৎ সরবরাহ করার ক্ষমতা আছে। এর ফলে প্রতিটা এলাকায় বিদ্যুতের ব্যবহার এতটাই বেড়ে গেছে যে গোটা গড়িয়া স্টেশন চত্ত্বরে কি দিনের বেলা আর কি রাতের বেলা, ভোল্টেজ থাকে না বললেই চলে। একে বাইরের প্রচন্ড তাপমাত্রা আর ভিতরে বিদ্যুতের অবনতি। পাখা চলে তার নিজের মনের গতিতে, মানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া আছে তাই সে ঘুরছে। মানুষের গায়ে হাওয়া লাগার জন্য নয়। রাতেরবেলায় বাল্ব তো এখন আর ব্যবহার হয় না, এখন অধিকাংশ বাড়িতে সি এফ এল লাইট অথবা এল ই ডি লাইট ব্যবহার হয়, সেই লাইটও তার নির্ধারিত ওয়াট অনুযায়ী জ্বলে না। এই গোটা গড়িয়া স্টেশন অঞ্চলে বেয়াইনি গ্রীল কারখানা চুটিয়ে ব্যবসা করছে যাদের অনেকেরই ৪৪০ ভোল্টের ইন্ডাস্ট্রিয়াল কানেকশন নেই, আবার এখন একটা নতুন ব্যবসা চালু হয়েছে, বাড়ির ভিতরে চুপিচুপি পাম্প দিয়ে ভূ-গর্ভস্থ জল তুলে তা ২০ লিটারের জারে ভরে বাড়ি বাড়ি সরবরাহ করা। এতে যেমন মাটির নীচের জলের স্তর নেমে যাচ্ছে সাথে আবাসিক হারে বিদ্যুতের বিল মিটিয়ে ইন্ডাস্ট্রিয়াল সুবিধা লাভ করছে। আর এর ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।পুরাতন যে ট্রান্সফরমার আছে তার ক্ষমতা বাড়ানোর কোন সদ ইচ্ছাও নেই এই বিদ্যুৎ অফিসের। তারা শুধু টাকার পিছনে ছুটছে। যত এসি মেশিনের অনুমতি দেবে দপ্তরের টাকার পরিমান তত বাড়বে, টাকা আদায়ের জন্য নাম হবে।এদিকে মানুষ সঠিক পরিষেবা পাক আর নাই পাক তা দেখার প্রয়োজন বোধ করে না বোয়ালিয়া ইলেকট্রিক অফিস। রাজ্যের পরপর দুজন বিদ্যুৎমন্ত্রী প্রচন্ড তৎপরতার সাথে কাজ করছেন বা করেছেন।বর্তমানে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এবং তার আগে মনীষ গুপ্ত দুজনেই খুবই দক্ষতার সাথে বিদ্যুৎ পরিষেবার ব্যাপারে নজর রেখেছেন। কিন্তু মন্ত্রী তো আর কাজ করবে না, কাজ করবে কর্মচারীরা। সেই কর্মচারীরা তাদের মন মর্জি কাজ করলে মন্ত্রী কি করবে। কতজনই বা মন্ত্রীকে অভিযোগ জানাতে পারবেন। আমি এর আগের বিদ্যুৎ মন্ত্রী মনীষ গুপ্তকে যখন জানিয়েছিলাম তখন তিনি সাথে সাথে এই বোয়ালিয়া অফিসের স্টেশন মাস্টার নির্মলবাবুকে স্থানান্তরিত করেছিলেন। এরপর শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বিদুৎমন্ত্রী হতে আমি তাকে এই ভোগান্তির কথা জানাতেই তিনি নতুন ট্রান্সফরমারের ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু সামান্য বাঁধা আসতেই বোয়ালিয়া অফিস কাজ না করে হাত তুলে নেয়, জানায় এলাকার মানুষ সহযোগিতা করছে না।আমার প্রশ্ন সরকারি কাজে কেউ বাঁধা দিলে তার জন্য প্রশাসন আছে। প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে দপ্তর উন্নয়নের কাজ করতেই পারে। একজন মানুষের জন্য একটা এলাকায় ৫০০ টা মানুষ ভুগবে আর সরকারি দপ্তর হাত গুটিয়ে দেখবে? বিদ্যুতের পোস্ট বসবে রাস্তায়, তাতে কার বাড়ির বেয়াইনি কার্নিশ আঁটকে যাচ্ছে বা কার বাড়ির শো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার জন্য এতগুলো মানুষ ভুগতে তো পারে না। প্রথমত বাড়ির কার্নিশ থাকার কথা বাড়ির পাঁচিলের মধ্যে তা কিভাবে রাস্তায় আসতে পারে? পৌরসভার কি ভূমিকা বা পুরপিতার কি ভূমিকা? তার মানে এখানেই পরিষ্কার যে যেমন ইচ্ছে কাজ কর দেখভালের কেউ নেই।এলাকায় গ্রীল কারখানা রয়েছে পুরপিতা ভাল করে জানে কে বেআইনি, এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ জলের কারখানা আছে তাও পুরপিতা জানে কে বেআইনি কিন্তু কোন নজরদারি নেই। সাধারণ মানুষ বলতে গেলে স্থানীয় স্বঘোষিত কিছু নেতা আছে তারা ধেয়ে আসবে রক্তচক্ষু করে, সাধারণ মানুষের উপর চড়াও হবে আর সে যা গালিগালাজ তা আর বলার নয়। বাড়ির মা-বোনেদের আর কিছু বাকি রাখে না। বোধহয় তাদের বাড়ি মহিলা বর্জিত বলে মনে হয় আর না হলে তাদের বাড়িতেও মা-বোন-স্ত্রী-কন্যাদের একই দশা। তাদের একটাই কথা প্রতিবাদ করা যাবে না। এভাবেই সহ্য করে থাকতে হবে।আর গঙ্গাজোয়ারা সাব স্টেশনের কথা তো বাদই দিলাম। সামান্য জোরে হাওয়া দিলেই তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় কারণ কথাও যদি তার ছিরে পরে যায়। যেখানে সারা রাজ্যে গত ৮ বছর ধরে লোড শেডিং কথাটা মানুষ ভুলেই গেছে সেখানে এই গঙ্গাজোয়ারা সাবস্টেশনের বদান্যতায় এখনও এখানকার মানুষ লোড শেডিং কথাটা ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে।বলতেই হয়, সত্যিই কি বিচিত্র এই দেশ সেলুকাস।