ইজেডসিসির উদ্যোগে মুক্তমঞ্চে লকডাউন পরবর্তী সময়ে নতুন অবতারে প্রাণ পেল থিয়েটার
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ২৭শে সেপ্টেম্বর ২০২০ : করোনার প্রাদুর্ভাব ও লকডাউন কবলিত জীবনযাত্রায় ইস্টার্ন জোনাল কালচারাল সেন্টার (ইজেডসিসি) কলকাতা ও দ্য বেঙ্গলের যৌথ উদ্যোগে সল্টলেকের রঙ্গমঞ্চ অ্যাম্ফিথিয়েটারে পূর্ণ সভাগৃহে মঞ্চস্থ হল থিয়েটার। স্বাস্থ্যবিধি সুরক্ষিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা থেকে শুরু করে স্যানিটাইজার, উষ্ণতা পরিমাপক মেশিনের পাশাপাশি ছিল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পিপিই পরিহিত স্বেচ্ছাসেবী কর্মী। থিয়েটার পরিবেশনার ক্ষেত্রেও ছিল অভিনবত্ব। কলাকুশলীরা দূরত্ব বজায় রেখে, স্পর্শ এড়িয়ে উপস্থাপনা করেন।
২১শে সেপ্টেম্বর রাজ্য সরকার মুক্তাঙ্গনে থিয়েটার অনুষ্ঠিত হওয়ার অনুমোদন দেওয়ার পর পূর্ব পশ্চিম প্রথম তাঁদের উদ্যোগ ‘জ্বরাসুরবধ পালা’র মঞ্চাভিনয় করেন। এই নাটকটির নির্দেশনা করেন সৌমিত্র মিত্র।
ইজেডসিসি কলকাতার চেয়ারম্যান গৌরী বসু বলেন, “যে সীমিত সংখ্যক উদ্যোক্তারা মুক্তাঙ্গনে থিয়েটার উপস্থাপিত করার বিষয়ে সচেষ্ট হয়েছেন, আমরা তাদের মধ্যে একজন। দর্শক, উদ্যোক্তা, কলাকুশলী নির্বিশেষে প্রতিটি ব্যাক্তি মাস্ক পরে অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। সাবধানতা অবলম্বন করতে প্রতিটি বক্তার বক্তৃতার পরে মাইক্রোফোন স্যানিটাইজ করা হয়েছে”।
ইস্টার্ন জোনাল কালচারাল সেন্টার (ইজেডসিসি) রিহার্সাল সহ অন্যান্য অ্যানুষঙ্গিক উপকরণের যোগান দিয়েছে। মাস্ক পরিহিত দর্শকদের জন্য নির্দিষ্ট দূরত্বে বসার বন্দোবস্ত করা হয়। স্বাস্থ্যসচেতনতা বজায় রাখার দিকে ছিল কড়া নজর, জানালেন ইজেডসিসির প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ অভিজিৎ চৌধুরী।
“কলকাতার হৃদস্পন্দন এই থিয়েটার মার্চ মাসে লকডাউন ঘোষিত হওয়ার পর পুরোপুরি স্তব্ধ হয়ে যায়। মঞ্চ উপস্থাপনার ক্ষেত্রে সামাজিক দূরত্ব বিধি বজায় রাখতে যে অভিনব কৌশল প্রয়োগ করা হয়েছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। অভিনয়ের ক্ষেত্রে স্পর্শ না করা, দূরত্ব বজায় রেখেও ভাবপ্রকাশ রীতিমত চ্যালেঞ্জিং। সাংস্কৃতিক ধারার এই বিবর্তন ও অভিনবত্বের সংযোজন থিয়েটারে এক নতুন যুগের সূচনা করল” জানালেন দ্য বেঙ্গলের সাম্মানিক সেক্রেটারি জেনারেল সন্দীপ ভূতোড়িয়া। কলকাতার বিশেষ ব্যক্তিত্বদের নিয়ে গঠিত এই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দ্য বেঙ্গল শিল্প সংস্কৃতি, সাহিত্যচর্চার সম্প্রসারণে ব্রতী।
থিয়েটার আমাদের প্রাণ, গতির শিক্ষা দেয়, সজীব করে তোলে অস্তিত্বকে; সেই থিয়েটারই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল মহামারীর কারণে। কিন্তু যে সাংস্কৃতিক মাধ্যম প্রবহমান তার গতিরোধ করা কঠিন। তাই সেটি খুঁজে নিয়েছে প্রকাশের বিকল্প ভাষা। পূর্ব পশ্চিম দলের কর্ণধার সৌমিত্র মিত্র জানান, একদিকে মহামারী ও অন্যদিকে বিধ্বংসী আমফানের দাপটে কর্মহারা নাট্যকর্মী ও আর্তজনদের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলাম দলের পক্ষ থেকে। এই কর্মসূচী ও পরিস্থিতি থেকে এক অদ্ভুত শিক্ষালাভ করি ও মনে আসে এক নতুন চিত্রনাট্য।
“এত সুন্দর চিত্রনাট্যের স্রষ্টা উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমি নিজের মতামত নিয়ে আলোচনা করি। নৃত্যপরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন সুকল্যান ভট্টাচার্য্য, যথাযথ সুরের আবেশের মিশেল ঘটান অভিজিৎ আচার্য্য। অভিনেতাদের চরিত্র অনুযায়ী তাঁদের পোশাক পরিকল্পনা করেন মালবিকা মিত্র। করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ সফল করতে আমাদের সমস্ত কর্মীবৃন্দ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে সমস্ত আয়োজন ও উপস্থাপনা সম্পন্ন করে। রিহার্সাল রুম স্যানিটাইজেশন, ব্যাক্তিগত পরিচ্ছন্নতা, নিরাপদভাবে যাতয়াত প্রভৃতি বিষয়ে নজর রাখা হয়েছিল। আমাদের দলের প্রতিটি সদস্যের জন্য আমরা বিশেষ মেডিক্লেম পলিসি ‘করোনা কবচ’ এর ব্যবস্থা করেছি। মঞ্চাভিনয় সফল করতে সদস্যদের নিরলস পরিশ্রম ও নিবেদিত মনোভাবের জন্য আমি ভীষণই গর্ববোধ করছি” জানান শ্রী মিত্র।
লুনা পোদ্দার বলেন পারফর্মিং আর্ট গ্রুপ প্রেরণা সেন্টার বিশেষ নৃত্য এবং একটি ঐকিক পরিবেশনা করেন। ‘তা তা থৈ থৈ’ নাটকের নির্দেশক নীলাদ্রিশেখর ব্যানার্জী জানান অভিনেতা ও কলাকুশলীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে পুরানো ধারা কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তিত করা হয়েছে।প্রচারে মিডিয়া শাইন