নজরুল আলি মন্ডল কেন প্রশাসনিক মণ্ডলী সদস্য থেকে অপসারিত হলেন তাই নিয়ে অসন্তোষ গোটা সোনারপুর উত্তরে
অম্বর ভট্টাচার্য, তকমা, সোনারপুর, ১৮ই আগস্ট ২০২১ : গতকাল সন্ধ্যার পর থেকেই রাজ্য সরকারের নগরোন্নয়ন দপ্তর থেকে রাজপুর সোনারপুর সহ বেশ কিছু পৌরসভার প্রশাসকমণ্ডলী সদস্যদের পরিবর্তন করে নতুন মুখ আনা হয়েছে। এই তালিকায় রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার দুবারের সি আই সি সহ সোনারপুর উত্তরের একজন দক্ষ সংগঠক নজরুল আলি মন্ডলের নাম বাদ পড়তেই গোটা সোনারপুর উত্তর বিধানসভায় বিশাদের ছায়া নেমে আসে।
সকলের কাছে যে প্রশ্নটা উঠে আসছে কেউই তার কোন উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না।নজরুল আলি মন্ডলের দক্ষতায় পরপর তিনবার সোনারপুর উত্তর বিধানসভা থেকে বিধায়ক হিসাবে জয়ী হন তাঁর স্ত্রী ফিরদৌসী বেগম, এর আগেও ২০০৯ সাল থেকে তাঁর নেতৃত্বে রাজপুর সোনারপুর পৌরসভা বামেদের হাত থেকে ছিনিয়ে তৃনমূল বোর্ড হয়।এছাড়া তাঁর নেতৃত্বে একাধিক দলীয় কর্মসূচী পালিত হয়। শুধু তাই নয় ২০২০ সালে থেকে এই করোনা পরিস্থিতিতে তিনি ও বিধায়ক ফিরদৌসী বেগম যেভাবে মানুষের পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন তা এই বিধানসভার মানুষ কখনও ভুলতে পারবে না।মানুষের হাতে যখন রোজগার নেই সেই সময় মানুষকে পর্যাপ্ত খাদ্য সামগ্রী তুলে দিয়েছেন।করোনার প্রভাব যখন চরমে তখন নিজে রাস্তায় নেমে জীবনের পরোয়া না করে গোটা বিধানসভার বিভিন্ন বাজার, দোকান থেকে ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকায় মানুষের বাড়ি পর্যন্ত স্যানিটাইজ করে দিয়েছেন। আমফান ও ইয়াস দুর্যোগের সময় মানুষের পাশে যেভাবে সহযোগিতা করেছেন তা অভাবনীয়।করোনা টীকা চালু হতে গোটা বিধানসভায় দলমত নির্বিশেষে মানুষকে বাঁচাতে নিয়ম করে সকলের কাছে টীকার কুপোন পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন।এর ফলে মানুষ অনেক উপকৃত হয়েছে। প্রতিদিন নিজে সব টীকাকেন্দ্রে গিয়ে পরিদর্শন করেছেন। এতকিছু সরকারি পরিষেবা ও ব্যক্তিগত পরিষেবা দেওয়ার পর কেন তাঁকে এভাবে সরানো হল তা বুঝে উঠতে পারছে না বিধানসভার মানুষ ও কর্মী, নেতারা। গোটা বিধানসভায় একটাই কথা বাতাসে ভাসে, কোন পৌর প্রতিনিধির কাছে গিয়ে যে পরিষেবা পাওয়া যায় না তা বিধায়কের অফিসে গেলে এই নজরুল আলি মন্ডলের উদ্যোগে পাওয়া যায়। কখনও তাঁর দরজা থেকে ফিরে আসতে হয় না। তবে বেশ কিছু মাস ধরে তাঁর বিকল্প একটা গোষ্ঠী তলে তলে বেশ তৎপর হয়ে উঠেছিলেন তাঁর বিরুদ্ধে। সকলে মনে করছেন তবে কি এই সিদ্ধান্ত তারই ফল। সদ্য হয়ে যাওয়া বিধানসভা নির্বাচনে এমনও কিছু পৌর প্রতিনিধিকে দেখা গেছে রাতের অন্ধকারে বিধায়কের বিরুদ্ধে প্রচার করতে। এমনও বলা হয়েছে “মমতা ব্যানার্জি আবার সরকার হয়তো করবে কিন্তু একটা আসন থেকে পরাজিত হলে সরকার গঠনে কোন আসুবিধা হবে না”।দলীয় কিছু নেতৃত্বকে এমনও বলতে শোনা গেছে “মোল্লাদের আর ভোট দেওয়া যাবে না”।উপরে উপরে নজরুল আলি মন্ডলের নেতৃত্বে থেকে তলে তলে তারই বিপক্ষে এভাবে যে সব নেতৃত্ব ছুরি মারার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তাদের এবার বাকি নেতৃত্বরা সনাক্ত করার কাজে নেমেছে।এরমধ্যে বেশ কিছু নাম প্রকাশ্যে উঠে এসেছে।
কিন্তু এব্যাপারে নজরুল আলি মন্ডলের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি জানান, দল যে সিদ্ধান্ত নেবে তা সকলের ভালোর জন্যই নেবে। নেতা কর্মীরা কিছুটা আবেগে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। আমার জীবনের আদর্শ দুই জন প্রথমজন সকলের নেত্রী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি আর দ্বিতীয়জন দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি।এই দুজনের উপর আমি পূর্ণ আস্থা রাখি, তাঁদের দেখেই রাজনীতি করা, তাঁদের আদর্শকে পাথেয় করে মানুষের পাশে থাকা। আগামীদিন আমি নিশ্চিত ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। আমি যেমন মানুষকে ভালবেসেছি তেমনই ভালবাসবো, যেমন দলকে ভালবেসেছি তেমনই বাসবো। সকলকে একটাই উপদেশ দেবো মাথা ঠান্ডা রেখে চলতে হবে। সব ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। সব সমস্যার সমাধান আছে।সকলকে দলের উপর ও নেত্রীর উপর ভরসা রাখতে হবে তবেই দল আগামীদিনে শক্তিশালী হবে।তবে তিনি এতকিছু বলা পরও বিধানসভার মানুষ মর্মাহত এবং কর্মী ও নেতৃত্বরা আশাহত।