মেডিকা হাসপাতাল ও বেঙ্গল চেম্বারের যৌথ উদ্যোগে উন্নত প্রযুক্তি দ্বারা স্বাস্থ্য সুস্থ রাখতে আয়োজিত হল দুদিনের “হেলথ টেক ২০২০”
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ২২শে ফেব্রুয়ারি ২০২০ : এখন প্রযুক্তি ছাড়া কোনও কাজই হয় না। সব জায়গায় সে হাজির। একই কথা বলা চলে স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রেও। নিত্যনতুন প্রযুক্তি এই পরিষেবাকে নতুন করে তুলছে যেন। মানও উন্নত হচ্ছে। তা সে রোগ নির্ণয় হোক বা ব্যবস্থাপনা, আর্থিক হিসাব রাখা অথবা অন্য কোনও প্রক্রিয়া। এটা বলা যেতেই পারে প্রযুক্তি আমাদের জীবনে এতটাই যুক্ত যে আমরা তার সাহায্যে নিজেদের শারীরিক অবস্থার বিভিন্ন তথ্য সহজেই জেনে যেতে পারি। সাধারণ দেখতে একটা হাতঘড়ি অনেক কিছু বলে দিতে পারে। ওই হাতঘড়িতে থাকা যন্ত্রের সাহায্যে আমরা হৃদস্পন্দন, পাল্স রেট জানতে পারি অনায়াসেই। প্রযুক্তি রোগ নির্ণয়, পরিষেবা, ব্যবস্থাপনাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। সব জায়গায় একই ছবি দেখা যাচ্ছে। এর ফলে অনেক সমস্যার সহজ সমাধান মিলছে। এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার নতুন দিক খুলে যাচ্ছে। উদ্ভাবনী শক্তির প্রবেশ নতুন সম্ভাবনা তৈরি করছে। স্টার্ট আপের জন্য নতুন দরজা খুলে যাচ্ছে। সম্প্রতি একটি রিপোর্টে তেমনই আশার কথা জানা গিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য পরিষেবায় প্রযুক্তি নির্ভর স্টার্ট আপের দারুণ সম্ভাবনা রয়েছে। এ দেশে ২০২২ সালের মধ্যে তাদের ব্যবসার ছুঁতে পারে ৩৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
হেলথ টেক বা ডিজিটাল স্বাস্থ্য ডেটাবেস, অ্যাপ্লিকেশন, মোবাইল, পরিধানযোগ্য কোনও জিনিস, লেনদেন, যত্ন, স্বাস্থ্য পরিষেবার বিভিন্ন যন্ত্রপাতির উন্নতি, তার বাণিজ্যিকীকরণের মতো বিষয়কে কাজে লাগায়। এর যথাযথ সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ এখানে প্রযুক্তি ব্যবহারের পরিধি অনেক দূর বিস্তৃত। এর মধ্যে থাকতে পারে হাসপাতাল, চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিমা, রোগী পরিষেবা ব্যবস্থা, ওষুধ এবং সরকার। এটা বলে রাখা ভাল, এই পরিষেবার গ্রাহক মানে রোগী এবং তাঁর পরিবার আর পরিষেবা প্রদানকারীরা যদি প্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের মধ্যে সম্পর্কের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারেন, তা হলে গোটা ব্যবস্থার অচিরেই আরও ভাল হয়ে উঠবে।
এ ব্যাপারে আরও নতুন দিক তুলে ধরতে উদ্যোগ নিয়েছে মেডিকা হসপিটালস এবং দ্য বেঙ্গল চেম্বার। তাঁরা হেলথ টেক ২০২০–এর আয়োজন করেছিল। কলকাতার ভিভান্তায়, ২১ এবং ২২ ফেব্রুয়ারি। এবার এই অনুষ্ঠান ৩ বছরে পড়ল। অনুষ্ঠানে প্রাইসওয়াটারকুপার্স ‘বিশ্বের স্বাস্থ্য নিরাপদ রাখতে প্রযুক্তির উন্নতিসাধন’ বিষয়ক একটি থট পেপার প্রকাশ করল।
মেডিকা গ্রুপ অফ হসপিটালস এবং দ্য বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রাক্তন সভাপতি ডাঃ অলোক রায় বলেন, ‘প্রযুক্তি ছাড়া আমাদের জীবনের কথা ভাবতেই পারি না। মোবাইল আসার পর দূর–দূরান্ত হয়ে উঠেছে ঘরের কাছের জায়গা। এর প্রভাব পড়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবাতেও। আরও সহজে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন রোগ নির্ণয় এবং তা সারাতে ডিজিটাল যন্ত্রপাতি অত্যন্ত কার্যকর। বিভিন্ন রিপোর্ট আগের থেকে অনেক কম সময়ে দেওয়া যাচ্ছে। রোগীর ঘরের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে পরিষেবা। ডিজিটাইজেশন আমাদের দক্ষতা আরও বাড়িয়ে তুলবে সন্দেহ নেই। একই সঙ্গে চিকিৎসার খরচ কমাবে, পরিষেবা হয়ে উঠবে আরও স্বচ্ছ। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। আগামী ৫–১০ বছরের মধ্যে তার গতিবেগ অনেকটাই বাড়বে।
স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন স্তরের মানুষদের এক ছাতার তলায় আনাই এই কর্মসূচির লক্ষ্য। এদের মধ্যে রয়েছে চিকিৎসক, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থা, প্রশাসক, প্রযুক্তিবিদ, নীতি নির্ধারক, লগ্নিকারী, স্টার্ট আপ, শিক্ষাবিদ, গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের পরও এই উদ্যোগ বজায় থাকবে।
দ্য বেঙ্গল চেম্বারের তথ্যপ্রযুক্তি কমিটির চেয়ারপার্সন, প্রাইসওয়াটারহাউজকুপার্স প্রাইভেট লিমিটেডের টেকনোলজি কনসাল্টিং লিডারের ম্যানেজিং পার্টনার (পূর্বাঞ্চল) অর্ণব বসু বলেন, ‘কোনও হাসপাতালে শয্যা খালি রয়েছে কি না, শরীরের বিভিন্ন দরকারি তথ্য, রোবোটিক সার্জারি, স্বাস্থ্য বিপর্যয় মোকাবিলার মতো ক্ষেত্রে ডিজিটাল উপায় অত্যন্ত কার্যকরী। তবে আরও অনেক ক্ষেত্রেই ডিজিটাল–সমাধান পাওয়া যেতে পারে। মানুষকে আরও ভাল স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে এর কোনও তুলনা নেই। দ্য বেঙ্গল চেম্বার, মেডিকার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়ে আমরা গর্বিত। ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি কমিটি। পূর্ব ভারতে এটা কাজ করবে। আমাদের আরও কয়েকটি পরিকল্পনা রয়েছে। যেমন সরকার, স্বাস্থ্য বিমা সংস্থা, স্টার্ট আপ, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাকে আরও কাছাকাছি আনতে হবে। এর ফলে দেশের মানুষ আরও ভাল পরিষেবা পাবেন। আমরা দেশের পূর্বাঞ্চলের স্বাস্থ্য পরিষেবা সম্পর্কে একটি রিপোর্ট তৈরি করব।’
দ্য বেঙ্গল চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি বি বি চ্যাটার্জি বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান দেশের অন্যতম প্রাচীন একটি প্রতিষ্ঠান। আমাদের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের নিত্যনতুন বিষয় সম্পর্কে আরও জানানোর দরকার রয়েছে বলে মনে করি। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একটি অত্যন্ত জটিল এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমরা চাইছি পশ্চিমবঙ্গকে মেডিক্যাল ট্যুরিজমের কেন্দ্র হিসাবে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে। এবং এই কাজ মোটেই কঠিন নয়। কারণ এখানে অনেক অভিজ্ঞ চিকিৎসক, উন্নত হাসপাতাল রয়েছে। এর পাশাপাশি চিকিৎসা পরিষেবায় উন্নত প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়।’
চিকিৎসার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় চিকিৎসকদের ভূমিকা, হেলথ টেক ক্ষেত্রে স্টার্ট আপের সম্ভাবনা এবং এ রাজ্যের সঙ্গে যোগ, স্বাস্থ্য বিমা, ওষুধ সংস্থা, স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারী স্টার্ট আপের জন্য লগ্নির ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যে প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ে সরকারের উদ্যোগ, স্বাস্থ্য পরিষেবায় বেসরকারি সংস্থা–সহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রচারে পারফেক্ট রিলেশন ও গ্রে ম্যাটার।