নিউটাউনে নবম বইমেলায় প্রকাশিত হলো “আন টোল্ড স্টোরিজ অফ নিউ টাউনস ওয়ার রুম”
দেবকুমার মল্লিক, তকমা নিউজ, কলকাতা, ২৬শে ডিসেম্বর ২০২২ : অস্কার ওয়াইল্ড বলেছিলেন, যে কেউ ইতিহাস গড়তে পারে, কিন্তু শুধুমাত্র একজন মহান ব্যক্তিই পারে ইতিহাস লিখতে।
শুক্রবার শিশিরে ভেজা সন্ধ্যায় নবম নিউ টাউন বই মেলার মঞ্চে বই প্রকাশ অনুষ্ঠানের সূচনা হলো একটি ইংরেজি গ্রন্থ “আনটোল্ড স্টোরিজ অফ নিউ টাউনস ওয়ার রুম”। কলকাতার গুরুত্বপূর্ণ উপনগরী নিউ টাউনের সৃষ্টি ইতিহাস নিয়ে লেখা প্রাক্তন আমলা , প্রেসিডেন্সি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী রাজ্যের সেরা ভূ বিশেষজ্ঞ পরিমল বন্দোপাধ্যায় ও প্রাক্তন সরকারি আধিকারিক প্রদ্যোৎ বিশ্বাসের গ্রন্থটি প্রকাশ করেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্য সচিব অমিত কিরণ দেব। অনুষ্ঠানটির নিবেদক বইটির প্রকাশক দাশগুপ্ত পাবলিশার্স। প্রকাশনা সংস্থার পক্ষে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অরবিন্দ দাশগুপ্ত। উপস্থিত ছিলেন স্থপতি সমর নাগ প্রমুখ ।
বইটির উদ্বোধন করে অমিত কিরণ দেব বলেন, “এই বইটি কোনো লেখকের কল্পনাপ্রসূত নয়। নয় কোনো রহস্য রোমাঞ্চের বই। তিরিশ বছর আগে কলকাতার পাশে গড়ে ওঠা একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ উপনগরীর ইতিকথা। নগর রূপায়ণের এক জীবন্ত দলিল। রীতিমত সুপরিকল্পিতভাবে অধ্যাবসায়কে সম্বল করে পরিমল বন্দোপাধ্যায় ও প্রদ্যোৎ বিশ্বাস বইটি লেখা ও সম্পাদনার দুরূহ কাজটি করেছেন”।
স্থপতি সমর নাগ বলেন, “নিউটাউন উপনগরী একটি আরবান প্ল্যানিং এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। এই কাজে সামাজিক এক মূল্য দিতে হয়। মূল্যবোধের সংস্কৃতি বোধ থেকে যতটা সম্ভব জমির স্থানীয় মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে সাড়ে সাত হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করতে প্রায় ৩৫০ একর জমির মালিকদের কাছ থেকে নেওয়া হয়। এই নিয়ে কোনো অসন্তুষ্টি ছিল না স্থানীয় জমি মালিকদের। রীতিমত তাঁদের সঙ্গে নিরন্তর আলোচনা করে প্রকল্পটি রূপায়িত হয়। এই প্রকল্পের জন্য যেমন রাজ্য ঋণী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর কাছে, তেমন এই কর্মযজ্ঞের যিনি হোতা প্রাক্তন মন্ত্রী গৌতম দেবের কথা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে”।
বইটির অন্যতম লেখক পরিমল বন্দোপাধ্যায় বলেন, “দেহ এখন বয়সের ভারে বিদ্রোহ করলেও মস্তিষ্কটা ঠিক আছে বলে এই গুরুভার গ্রহণ করেছি।তবে অনেকের সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব হয় নি। প্রথমে এই বাঘেরহাট অঞ্চলে নগর পত্তনের সময় ঠিক হয়েছিল অঞ্চলের নাম হবে রাজারহাট টাউন শীপ। কিন্তু অঞ্চলের রূপকার গৌতম দেব চেয়েছিলেন নিউ বোম্বের মত অঞ্চলের নাম হোক নিউ কলকাতা। পরে অবশ্য নাম স্থির হয় নিউ টাউন।”
উল্লেখ করা যেতে পারে, সমুদ্রতল থেকে ৩০ ফুট ( ৯ মিটার) উচ্চতায় মোট ৩৫.৫২ কিলোমিটার পরিবৃত্তে অবস্থিত এই নতুন উপনগরীর নাম জ্যোতি বসু নগর রাখার সিদ্ধান্ত বাম আমলে গৃহীত হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সরকারে রাজনৈতিক পরিবর্তনে সেই প্রস্তাব খারিজ হয়। তখন রাজ্যের বুদ্ধিজীবী মহল ও ক্রিকেটার সংবরণ ব্যানার্জি,ফুটবলার চুনী গোস্বামী প্রমুখ প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। কিন্তু ইতিহাস থেকে মুছে গেছে জ্যোতি বসার নাম। স্মরণে রাখা হয় না নিউটাউন প্রকল্পের রূপকার গৌতম দেবের নাম।