তথ্য রহস্য

বিপ্লবী সন্তোষ মিত্র ও তারকেশ্বর সেনের মৃতদেহ নিতে নেতাজি হিজলি যান, গর্জে ওঠেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

অম্বর ভট্টাচার্য, তকমা নিউজ, কলকাতা, ১৬ই আগস্ট ২০২৩ : দেশের আর একটি স্বাধীনতা দিবসের সাথে সাথে একই দিনে ঋষি অরবিন্দ ও কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্মদিবস৷ আরো একজনের জন্মদিন কিন্তু তার নাম জানলেও আম বাঙালি আজো চিনলো না তাকে……. ! তিনি যে ঈশ্বরের দূত ……..‌তিনি সন্তোষ মিত্র, প্রেসিডেন্সি কলেজে তাঁর সহপাঠী ছিলেন স্বয়ং নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু।

কলকাতার দুর্গাপূজা বলতে যে কয়েকটি মন্ডপ এর কথা এক বাক্যে সবার মাথায় আসে, তার মধ্যে অন্যতম সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার। নানা কারণে খবরের শিরোনামে আসে এই পূজা। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ এই মন্ডপে আসেন। কিন্তু কেউ কি একবারও জানতে চেয়েছেন এই সন্তোষ মিত্র আসলে কে? সন্তোষ দত্তকে তো আমরা এক ডাকে চিনি কিন্তু সন্তোষ মিত্র? উদাসীন কলকাতা পুরসভাও পার্কে শুধু একটা ফলক লাগিয়েই খালাস। ভুলে যাওয়া সেই ইতিহাসকে চলুন একবার দেখে নেই৷

উত্তর কলকাতার এক কায়স্থ পরিবারে সন্তোষ মিত্র জন্ম নেন ১৯০১ সালের ১৫ আগস্ট। হিন্দু স্কুল এবং প্রেসিডেন্সি তে পড়াশুনা করেন। প্রেসিডেন্সি তে তাঁর সহপাঠী ছিলেন সুভাষ চন্দ্র বসু। কলেজ জীবন থেকেই তাঁর স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু। মূলত অহিংস আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হলেও, যুগান্তর গোষ্ঠীর বারীন ঘোষের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল। সেই সুবাদে ১৯২৩ সালে দ্বিতীয় আলিপুর ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে গ্রেফতার হতে হয়। বিখ্যাত আইনজীবী যতীন্দ্রমোহন সেনগুপ্ত তাঁকে ছাড়িয়ে আনেন। এরপরেও তাঁর আন্দোলন চলতে থাকে। ফের গ্রেফতার হন ১৯৩০ সালে। সেই সময় বিভিন্ন জেলে কয়েদিদের চাপ এত বেড়ে গেছিল যে কয়েকটি অস্থায়ী কারাগার তৈরি করতে বাধ্য হয় ব্রিটিশ সরকার। হিজলিতে তৈরী হয় একটি অস্থায়ী কারাগার। সেখানেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

১৯৩১ সালের ২৭শে জুলাই কোর্টরুম চত্বরে খুন হন অলিন্দ যুদ্ধের নায়ক দীনেশ গুপ্তকে ফাঁসির আদেশ শোনানো বিচারপতি গারলিক । পুলিশ আততায়ীকে ধরতে গেলে সে সেখানেই আত্মহত্যা করে। তাঁর পকেট থেকে বিমল দাশগুপ্ত নাম লেখা চিরকুট পাওয়া যায়। যদিও সেটা তাঁর আসল নাম ছিল না। এই ঘটনায় স্বভাবতই খুশির হওয়া ছড়িয়ে পরে হিজলি জেলের কয়েদিদের মধ্যে। এই খবরে পেয়ে ক্ষিপ্ত প্রশাসন ১৬ সেপ্টেম্বর ১৯৩১ সালে হিজলি জেলে কয়েদিদের উপর গুলি চালাতে শুরু করে। যদিও কেউ কেউ বলেন প্রশাসন কে ঠুঁটো বানিয়ে ওই কাজ করেছিলেন স্থানীয় ইউরোপিয়ান ক্লাবের কয়েকজন সদস্য। কি ঘটছে সেটা দেখতে সেলের বাইরে আসেন সন্তোষ মিত্র এবং বরিশালের তারকেশ্বর সেন। বুলেট বিদ্ধ হন তাঁরা। সেখানেই মারা যান। এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দায় সরব হন সবাই। স্বয়ং নেতাজি তাঁদের মৃতদেহ নিতে হিজলি যান। গর্জে ওঠেন রবীন্দ্রনাথ, প্রশ্ন রাখেন ঈশ্বরের কাছে, “যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু নিভাইছে তবে আলো”……….

২৬শে সেপ্টেম্বর মনুমেন্ট এর নিচের সমাবেশ থেকে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানান তিনি। ২৮শে সেপ্টেম্বর এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সেন্ট জেমস স্কোয়ার এর নাম বদলে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার রাখে কলকাতা কর্পোরেশন।

তবে সন্তোষ মিত্রের মৃত্যু যেখানে হয় সেই জায়গাটাকে আমরা এখন অন্য নামে চিনি। ১৯৪২ সালে হিজলি ক্যাম্প বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ১৯৫১ সালে সেই জমিতেই গড়ে ওঠে স্বাধীন ভারতের অন্যতম উৎকর্ষ কেন্দ্র আই আই টি খড়গপুর। ১৯৯০ সালে কুখ্যাত হিজলি ক্যাম্প এর এক অংশে তৈরী হয় নেহেরু মিউজিয়াম অফ সাইন্স এন্ড টেকনোলজি। যেখানে বসানো হয় এই দুই বিপ্লবীর নামের ফলক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *