সিন্ধু সভ্যতার সেচব্যাবস্থা- মানুষকে যাযাবর জীবন ছেড়ে স্থায়িত্ব এনে দেয়
অম্বর ভট্টাচার্য, তকমা নিউজ, কলকাতা, ২২ শে নভেম্বর ২০২৩ : প্রায় ৭০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ বেলুচিস্তানে সিন্ধু উপত্যকায় সর্বপ্রথম কৃষির উদ্ভব হয়েছিল। কৃষির উদ্ভবের ফলে মানুষ যাযাবর বৃত্তি ছেড়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে, যার ফলে তাদের জনসংখ্যা দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছিলো। কৃষির অত্যধিক পরিমাণে উন্নতির কারণে সাধারণ মানুষের কাছে প্রচুর পরিমাণে উদ্বৃত্ত বেঁচে যাচ্ছিল। যার মাধ্যমে মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে আর ক্রমশ তারা একটি গ্রামীণ সংস্কৃতি থেকে একটি নগর সভ্যতায় পরিণতি লাভ করে। হরপ্পা সভ্যতার মহেঞ্জোদারো এবং হরপ্পার বৃহৎ নগর কেন্দ্র গুলিতে সম্ভবত ৩০,০০০ থেকে ৬০,০০০ ব্যক্তি বসবাস করত এবং সভ্যতার প্রাপ্ত বয়সে , উপমহাদেশের জনসংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছিল।
সিন্ধু দেশের মানুষেরা সম্ভবত লাঙ্গলের ব্যবহার জানত না। কারণ, লাঙ্গল দিয়ে মাটি চষার প্রচলন হয় লৌহ যুগ চলাকালীন। তারা চাষ করত শুধুমাত্র খাঁজকাটা মই এর সাহায্যে।

সিন্ধুর আবহাওয়া এবং বন্যাসেচিত জমির কৃষিকাজ সম্পর্কে সবচেয়ে প্রাচীন বর্ণনা পাওয়া যায় আলেকজান্ডারের সেনাপতিদের কাছ থেকে। এই বিবরণীগুলির গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি, কেননা উত্তর পাঞ্জাব ও নিম্ন সিন্ধুর আপাত বৈসাদৃশ্য স্ট্রাবোকেও বিস্মিত করেছিল। আলেকজান্ডারের সেনাপতি অ্যারিস্টোবোলাস বলেছেন তারা সিন্ধুনদের নিম্ন অববাহিকায় দশমাস জাহাজে কাটিয়েছেন, কিন্তু কখনও বৃষ্টি দেখেননি। কিন্তু নদীগুলি থাকত পূর্ণ এবং সমতলকে প্লাবিত করত। উল্টোপাল্টা ঝোড়োহাওয়ায় সমুদ্রে জাহাজ চালানো ছিল দুরূহ, কিন্তু তীরের দিক থেকে কোন বাতাস আসত না।
বৃষ্টিনির্ভর চাষ ঘন অরণ্যের অস্তিত্বের আভাস দেয়। কিন্তু সিন্ধু সভ্যতার চাষবাস বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভরশীল ছিল না, বরং অনেক বেশী নির্ভরশীল ছিল সেচের উপর। সেই সেচ ব্যবস্থা হয়তো এখনকার মতো পরিকল্পিত ভাবে খাল কেটে নাও হতে পারে। জলোচ্ছাসের ফলে নদীচরে জমা হওয়া উর্বর পলির ব্যবহার ছাড়াও, সিন্ধুর ছোট খাড়িতে বাঁধ বাঁধার প্রচলন ছিল। আলবাঁধের সাহায্যে তীরবর্তী জমিতে বন্যার জল ঢুকিয়ে নেওয়া সম্ভব হত এবং উভয় ক্ষেত্রেই মইয়ের সাহায্যে কর্ষণ করা হত। এর ফলে হয়তো নিয়মিত শস্য ফলানো যেত – কিন্তু খালের জলসেচিত গভীরতর লাঙ্গল কর্ষিত জমির তুলনায় তা সীমিত।
মেসোপটেমিয়ায় সায়গণ যুগের অনেক আগেই খালের জল ব্যবহারের সূচনা হয়েছিল। যদিও তার আগে সুমেরীওরাও বন্যাবাহিত পলিতেই শস্য ফলায়।