এবার কাটমানি নিয়ে গড়িয়া স্টেশনে বিক্ষোভ, অভিযুক্ত পলাতক, পড়ল পোস্টার
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ১৬ই জুলাই ২০১৯ : সারা রাজ্যজুড়ে মমতা ব্যানার্জির কাটমানি নিয়ে ঘোষণার পর বহু জায়গায় মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। ঠিক একই ভাবে সোনারপুর উত্তর বিধানসভায় রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ৪ নং ওয়ার্ডে নাট্যমহল এলাকায় মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ল এই ওয়ার্ডের একসময় ওয়ার্ড কমিটিতে থাকা সদস্য সমরেশ সাহা-র বিরুদ্ধে। এই সমরেশ সাহা একসময় বামপন্থী রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০১১ সালে পরিবর্তনের পর তিনি তৃণমূলের খুব ঘনিষ্ট হয়ে ওঠেন। তিনি এই ওয়ার্ডের পুরপিতা বিভাস মুখার্জির অফিসে এসে হন্যে দিয়ে পড়ে থাকতেন। কিন্তু ভিতরে ভিতরে তিনি যে অন্য ফন্দি আটছেন তা কে জানতো। পেশায় তিনি হরিনাভি স্কুলের কেরানী। বিবাহিত হলেও তার স্ত্রী তার বাপের বাড়িতেই থাকে। এই সুযোগটাই তিনি খুব ভাল করে নিয়েছে। তিনি নাট্যমহলের রবীন্দ্রনগর এলাকার বাসিন্দা। সেখানে বহুদিন ধরে এক মহিলার সাথে অবৈধ সম্পর্কে লিপ্ত বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে। সেই মহিলার স্বামী মারা গেলে এই সমরেশ সাহা তার সাথে বিভিন্নভাবে ঘনিষ্ট হয়। এমনকি সেই মহিলার পুত্র তৃণমূলের এক জেলা সভাপতির কাছে গিয়ে অভিযোগ করে বলেও জানা যায়। এছাড়া বহু মানুষকে বিভিন্ন সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে টাকা আত্মস্বাদ করেছে এই সমরেশ সাহা। এমনকি পুলিশের ভয় দেখিয়ে টাকা তুলেছেন, পারিবারিক সমস্যা সমাধানের নামে দুই পক্ষের থেকে টাকা নিয়েছেন, নিজেকে মাস্টার হিসাবে পরিচয় দিয়ে নানাভাবে আইনি ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলেছেন ও প্রতারণা করেছেন, এমনকি বহিরাগতদের এনে পাড়ায় এলাকা দখল পর্যন্ত করতে গিয়েছেন।সমরেশ সাহা ও তার কিছু অনুগামী এলাকার এক যুবককে কাটমানি না দেওয়ার জন্য মারধর করে বলেও অভিযোগ ওঠে। কিন্তু মানুষ বহুদিন ধরেই এই অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সুযোগের অপেক্ষায় ছিল, মমতা ব্যানার্জির ঘোষণার পরই আজ তার নামে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার ফেলে গোটা গড়িয়া স্টেশন এলাকা থেকে পৌরসভা অফিসে। বিকালে এলাকায় তার বিরুদ্ধে কাটমানির অভিযোগে তৃণমূলের পতাকা নিয়ে মিছিল করে এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা।অবশেষে এলাকায় পুলিশ আসে এবং তার বাড়িতে খোঁজ করলে জানা যায় তিনি পলাতক। অন্যদিকে শোনা যায় তিনি এই ঘটনার আঁচ করতে পেরে আগেই নরেন্দ্রপুর থানার সামনে ছিলেন। পুলিশ তার ফোনে যোগাযোগ করে তাকে থানায় আসার নির্দেশ দেন বলেও জানা যায়। পুরপিতা বিভাস মুখার্জিকে এব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, সমরেশ সাহা আমার ওয়ার্ড কমিটির মধ্যে ছিল ঠিকই কিন্তু তার কিছু কাজকর্মের উপর সন্দেহ হওয়াতে তাকে ওয়ার্ড কমিটি থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। সমরেশ সাহা এলাকার বহু উন্নয়নের কাজে বাঁধা প্রদান পর্যন্ত করেছে। তার বাঁধাকে উপেক্ষা করে আমি কাজ করতে চাইলে আমায় নিয়ে নোংরা রাজনীতি করেছে এবং বিভিন্ন ভাবে হেনস্থা ও অপদস্থ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাতে আমায় দমাতে পারে নি, ওয়ার্ডে উন্নয়ন করেছি, আরও করবো। আজ মানুষ তার কাজের জবাব দিয়েছে। এর আগেও রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডে কাটমানির বিরুদ্ধে বিজেপি মিছিল করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। আস্তে আস্তে গড়িয়ার আরও কিছু ওয়ার্ডে এই কাটমানি নিয়ে বিক্ষোভের ক্ষোভ দানা বাঁধছে। খুব তাড়াতাড়ি গড়িয়ে স্টেশন সংলগ্ন আরও ওয়ার্ডে এই বিক্ষোভ শুরু করতে চলেছে বিজেপি বলে জানা যায়।সেই ওয়ার্ডের মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। মমতা ব্যানার্জির এই ঘোষণার পর মানুষের প্রতিবাদের সাহস বেড়ে গেছে। মানুষ এতদিন মুখ বুজে সহ্য করেছে কিন্তু এবার আর সহ্য করতে রাজি নয় কারণ জানে তাদের পিছনে মুখ্যমন্ত্রী আছে, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী নিজে নম্বর দিয়ে দিয়েছেন কোন অভিযোগ থাকলে তার সাথে সরাসরি যোগাযোগের জন্য।