শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার ২৫ বছর পূর্ণ করল দক্ষিণী প্রয়াস কলকাতার আইসিসিআর–এ আয়োজিত হল বর্ণময় অনুষ্ঠান
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ১৬ই আগস্ট ২০১৯ : এ এক অসাধারণ যাত্রার কাহিনি। ২৫ বছর ধরে একটি সংগঠন শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করছে। কোনও প্রশংসাই তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। দক্ষিণী প্রয়াসের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হল। কলকাতার আইসিসিআর–এ রবিবার, ১১ আগস্ট।শিক্ষা কেবল ক্লাসরুমের গন্ডিতে আটকে নেই।
![](http://takmaaa.com/wp-content/uploads/2019/08/GNIT-China-1024x531.jpg)
এখন তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিচ্ছন্নতা, প্রচার, বাস্তবিক প্রয়োগ। যা আসলে মানবিক মূল্যবোধ, সহযোগিতা এবং সমবেদনার কথা বলে। শিক্ষা একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। যার প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য হল তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কিছু বদল আনা। যাতে তারা আগামী দিনে দেশের দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে উঠতে পারেন।
আর এই ভাবনা থেকেই ২৫ বছর আগে কাজ শুরু করেছিল দক্ষিণী প্রয়াস। নলিনী মুখার্জির উদ্যোগে। মাদুরদহের কয়েকজন শিক্ষাবঞ্চিতের কাছে শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়ার মাধ্যমে। গাছের তলায় শুরু হয়েছিল পাঠশালা। তখন পড়ুয়ার সংখ্যা ছিল মাত্র ৪।
![](http://takmaaa.com/wp-content/uploads/2019/08/GNIT-China-1-1024x665.jpg)
এর পর তার সঙ্গে যোগ দেন কমল প্রকাশ নামে আর এক শিক্ষানুরাগী। তিনি আর্থিক ভাবে সাহায্য করেন। কেনা হল এক টুকরো জমি। তৈরি হয় প্রতিষ্ঠানের ভবন। শুরু হয় দক্ষিণী প্রয়াসের শিক্ষা শাখা মাদুরদহ সত্যবৃত্তি বিদ্যালয় (এমএসভি)–এর পথ চলা। লেখাপড়ার পাশাপাশি এখানে পড়ুয়াদের হাতেকলমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থাও কার হয়। এক আশ্চর্য দোকান রয়েছে স্কুলে। সেখানে পাওয়া যায় হাতে তৈরি আকর্ষণীয় জিনিসপত্র, বাহারি গাছ। যার উদ্দেশ্য অন্য ধরনের উপহার এবং পরিবেশ বাঁচানোর বার্তা আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়া।
দক্ষিণী প্রয়াসের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওই প্রতিষ্ঠানের যুগ্ম–সম্পাদক অনুভূতি প্রকাশ বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রোজই নতুন কিছু না কিছু করার ভাবনাচিন্তা করি। আমরা স্বামী বিবেকানন্দের দেখানো মানুষের মতো মানুষ তৈরির পথে হাঁটছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই সংগঠনের কাজ শুরু হয়েছিল খুব ছোট একটা জায়গায়। কয়েকজন পড়ুয়ার শিক্ষা, স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা দিয়ে। এর মাঝে কেটে গেছে ২৫ বছর। এখন এটা মডেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখন ৪০০ জন পড়ুয়া শিক্ষার সুযোগ পায়। সেইসঙ্গে স্বাস্থ্য পরিষেবাও। রয়েছেন ৩৬ জন শিক্ষক। এর সঙ্গে একদল স্বেচ্ছাসেবী। কলকাতার এক প্রান্তে নিঃশব্দে এক বড়সড় কাজ হয়ে যাচ্ছে। সবথেকে বড় কথা এটা পুরোটাই নিখরচায় এবং সুসংহতভাবে। এখানে অনেক এমন পড়ুয়া আসেন যাদের পরিবার আর্থিকভাবে দুঃস্থ। তাদের সাহায্য করা হয় ভিন পথে। পড়ুয়ার মায়েদের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। যাতে তারা উপার্জন করতে পারেন। আর্থিক সাহায্যও করা হয়। শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়রা জন্য কোনও খরচ নেওয়া হয় না।’
এখানে ছাত্র শিক্ষকের অনুপাত ১:১। গোটা পূর্ব ভারতে যা সেরা। এখানে রয়েছেন ২০ জন স্বেচ্ছাসেবক। সব মিলিয়ে কর্মীর সংখ্যা ৪৭। এখনও পর্যন্ত এক হাজার পরিবার উপকৃত হয়েছেন। এখানে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া শেখানো হয়। তারপর তারা চলে যায় সরকারি স্কুলে, বোর্ডের পরীক্ষার জন্য। পুরনো পড়ুয়াদের জন্য এখানে সকালে বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা রয়েছে। ২০১৭ সালে এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম ব্যাচের পড়ুয়ারা উচ্চ মাধ্যমিক দিয়েছিল। বেশ ভাল ফল হয়েছিল। ৪ জন পড়ুয়া আশি শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছিল। এখনও পর্যন্ত মেধাবৃত্তি পেয়ে ৭৩ জন পড়ুয়া অন্য স্কুলে ভর্তি হয়েছে।
অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতায় চীনের কনসাল জেনারেল ঝা লিইয়ু। তিনি এই সংগঠনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেছেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় ইটালির কনসাল জেনারেল ডামিয়ানো ফ্রাঙ্কোভিগ।প্রচারে : গ্রে ম্যাটার্স।