পুরুষবৃত্তের ভেতরে তিনটি নারীর নিজের সত্ত্বার অনুসন্ধান নিয়ে সব্যসাচীর “তিনকন্যা”-য় সায়ন্তনী, রী সেন ও অমৃতা
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ২১শে সেপ্টেম্বর ২০১৯ : অনেক জল্পনার পর, এবার স্বপ্নের শুরু, কথাটা এই দিয়ে শুরু করল অভিনেত্রী সায়ন্তনী। আমার প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছবির প্রাথমিক কাজ মোটামুটি শেষ । ছবির নাম “তিনকন্যা”।এই ছবিতে আছে তিনটে গল্প…বিনোদিনী, বেডশীট ও গুড মর্নিং রেভোল্যুশন । ইংরেজিতে নাম Women with keys…. তিনটি সম্পূর্ণ আলাদা গল্প । কিন্তু যোগসূত্র থাকবে দ্বিতীয় লিঙ্গের উত্তরণে । পুরুষবৃত্তের ভেতরে তিনটি নারীর নিজের সত্ত্বার অনুসন্ধান । কখনো সাংস্কৃতিক দুনিয়ার পুরুষ আধিপত্য, কখনো রাজনৈতিক ডিসকোর্সে নারীর আত্মানুসন্ধান, কখনো সাব অল্টার্ন এক নারীর রুখে দাঁড়ানোর গল্প.. তিন কন্যার অভিনয় করছেন রী সেন, সায়ন্তনী গুহঠাকুরতা ও অমৃতা চ্যাটার্জি। প্রযোজিকা মনিদীপা মুখার্জির ছবির জগতে এটাই প্রথম পদক্ষেপ ।
সায়ন্তনী জানায়, সামনের মাসে শ্যুটিং, সকলের শুভেচ্ছা, ভালোবাসা ও আশীর্বাদ চাইছি । বিশাল একটা ইচ্ছের সামনে হয়তো এই তিনটি বিষয়ই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । ৯০ মিনিটের ছবি… দেশ বিদেশের ফেস্টিভ্যালে পাঠানো হবে… হল রিলিজের ইচ্ছে আছে.. মূলত একটি ওয়েব-ফিল্ম যা কোনো ওয়েব প্ল্যাটফর্মে দেখানো হবে। শুটিং সামনের মাসে।পরিচালক সব্যসাচী ভৌমিকের এটি প্রথম পূর্ণাঙ্গ ছবি যদিও এর আগে কয়েকটি শর্ট ফিল্ম করেছেন যেমন 6th August, we r locked, সব রাত্রি কাল্পনিক। “তিনকন্যা” ছবিতে তিনটি গল্প পরস্পরকে ছুঁয়ে থাকে যেমন “বিনোদিনী” মূলত সাংস্কৃতিক জগতে পুরুষ আধিপত্যবাদের গল্প।এখানে বিনোদিনীর বিনির্মিত রূপের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে এক নারী নিজেকে খুঁজে পায় বিনোদিনীর জায়গায়। প্রতিবাদ করে, আজকের বিনোদিনীর প্রতিবাদে উঠে আসে অন্য নারীর অন্য মুখ যার মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন রি সেন।পরের গল্পটা “বেডশীট”, এক সাব অল্টার্ন নারীর চোখে এই সম্ভ্রান্ত সমাজকে দেখার একটা গল্প। একটি বেডসীট চুরি ঘিরে আবর্তিত হয় ছবিটি। উঠে আসে বিভিন্ন চরিত্রের মুখোশের আড়ালে আসল মুখ।চিহ্নিত হয় সমাজের ক্রুর ও লোলুপ পরিকাঠামো। এক পরিচারিকার জীবন এখানে মূর্ত প্রতিবাদ যার মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন সায়ন্তনী গুহ ঠাকুরতা এবং বিপরীতে অভিনয় করছেন ঈশান মজুমদার। আর শেষ গল্পটা “গুড মর্নিং
রেভোল্যুশন” একটি পলিটিক্যাল ডিসকোর্স। উচ্চবিত্ত পরিবারের একটি কলেজ ছাত্রীর জীবনে বিপ্লবী রাজনীতির সংযোগ কিভাবে তার সম্পর্কে পরিবারের অন্যদের ধারণা পাল্টে দেয় সেই নিয়েই ছবিটি।ছবিতে মিডল ক্লাস মানসিকতায় বিপ্লবী রাজনীতির প্রতি অকারণ রোম্যান্টিসিজম কেও ব্যঙ্গ করা হয়েছে।শেষ পর্যন্ত নিজের জীবন নিজের মতো করেই বাঁচাটাই আসল বিপ্লব, তাই উচ্চারিত হয় যার মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন অমৃতা চট্টোপাধ্যায়। কোনো উচ্চকিত নারী সংগ্রাম নয়, সব্যসাচী তাঁর আগের ছবিগুলোর মতোই এই ছবিতে নারীর ভেতরের সত্ত্বাকেই খুঁজেছেন। যেখানে ইতিহাসে নারীর অবস্থান নিয়েও সমান্তরাল প্রশ্ন ও প্রতিবাদ রাখা হয়েছে। ছবির প্রযোজকও একজন মহিলা, মণিদীপা মুখার্জির প্রথম নিবেদন এবং এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার হিসেবে আছেন স্বাতী গাঙ্গুলি। ছবির ডিস্ট্রিবিউশনে এনক্যাশ এন্টারটেইনমেন্ট।এর আগেও “তিনকন্যা” হয়েছে যার পরিচালক ছিলেন সত্যজিৎ রায় (১৯৬১) ও অগ্নিদেব চ্যাটার্জি (২০১২) কিন্তু সব্যসাচী কিছুটা অন্য বার্তা দিতে চেয়েছেন তাঁর ছবিতে যা আজকের মহিলাদের উৎসাহ যোগাবে।ইতিমধ্যে এই ছবি ভার্জিন স্প্রিং সিনেফেস্টে সেরা প্রযোজকের পুরস্কার পেয়েছে এবং কাল্ট ক্রিটিক মুভি অ্যাওয়ার্ডে সেরা ছবি হিসাবে পুরস্কৃত হয়। এরপর আরও পুরস্কার ঝুলিতে আসতে থাকবেই।