মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির নির্দেশে করোনার দুর্ভোগে দুঃস্থ, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্দীদের জন্য বিধায়ক ফিরদৌসী “নগর লক্ষ্মী” মাস কিচেন থেকে রান্না করা খাদ্য সরবরাহ করছেন
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ২১শে এপ্রিল ২০২০ : করোনার মহামারীর ফলে সারা বিশ্বে এখন মৃত্যু মিছিল শুরু হয়ে গেছে, যদিও এই পরিস্থিত গত ১৫ দিনে প্রচন্ড পরিমানে বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ২৫ লাখ ৪৩ হাজার ৫৮৮ জন যার মধ্যে মারা গেছেন ১,৭৬,৫৯৬ জন। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যায় প্রথমদিকের দেশ বলতে গেলে আমেরিকা ৪৪,৫৫২ (আক্রান্ত ৮,১১,৪৭৮), ইতালি ২৪, ৬৪৮ (আক্রান্ত ১,৮৩,৯৫৭), স্পেন ২১,২৮২ (আক্রান্ত ২,০৪,১৭৮), ফ্রান্স ২০,৭৯৬ (আক্রান্ত ১,৫৮,০৫০), ইংল্যান্ড ১৭,৩৩৭ (আক্রান্ত ১,২৯,০৪৪), বেলজিয়াম ৫,৯৯৮, ইরান ৫২৯৭, জার্মানি ৫০২৪, চীন ৪৬৩২। ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৮,৯৮৫ যার মধ্যে মারা গেছেন ৬০৩ জন। তবে বাংলায় সেভাবে প্রথমদিকে প্রকোপ না থাকলেও ধীরে ধীরে তা বেশ ভালোই জায়গা করে নিচ্ছে। গোটা ভারতে আক্রান্তের সংখ্যায় এগিয়ে মহারাষ্ট্র, আক্রান্তের সংখ্যা ৪৬৬৯, দিল্লি ২০৮১, গুজরাট ২০৬৬, রাজস্থান ১৫৭৬, মধ্যপ্রদেশ ১৫৪০, তামিলনাডু ১৫২০, উত্তরপ্রদেশ ১২৯৪, তেলেঙ্গানা ৯১৯, অন্ধ্রপ্রদেশ ৭৫৭, পশ্চিমবাংলা ৩৯২ এবং এই রাজ্যে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১৫ জনের।
কেন্দ্র সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই রাজ্যে ৪টি জেলাকে রেড জোন হিসাবে ঘোষণা করেছে। এর মানে এই জেলাগুলোতে আক্রান্তের সম্ভবনা প্রচন্ড। আর কয়েকটা জেলাকে অরেঞ্জ জোন হিসাবে ঘোষণা করেছে, মানে এখানে আক্রান্তের সংখ্যা থাকলেও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ার সম্ভবনা রয়েছে।তার মধ্যে রয়েছে দঃ ২৪ পরগণা জেলা। এই জেলার মধ্যে একটা বড় অংশ নিয়ে রয়েছে সোনারপুর ব্লক। এই সোনারপুর ব্লকের অধীনে সোনারপুর পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত খেয়াদহ অঞ্চলটা একেবারে কলকাতা লাগোয়া হওয়ার কারণে সম্পূর্ণ লকডাউনের আওতায় ফেলা হয়েছে। মানুষের যাতায়াতের উপর এবং বাজার হাট খোলা নিয়ে শুরু হয়েছে খব নজরদারি। এই অঞ্চলের মধ্যে নরেন্দ্রপুর থানার পর্যবেক্ষনে মানুষকে সচেতন করা থেকে শুরু করে নজরদারীর কাজ চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিধায়ক ফিরদৌসী জানান, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রাতদিন এক করে মানুষের পাশে রাস্তায় নেমে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা তাঁর সৈনিক হিসাবে আমার বিধানসভা কেন্দ্রে মাস কিচেন করেছি। একমাস পর এই মাস কিচেন চালু করলাম কারণ আমার এই বিধানসভা কলকাতা জেলা লাগোয়া বলে সম্ভাবনা থাকার কারণে অরেঞ্জ জোন করেছে। তাই আমি মানুষকে সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার জন্য বারেবারে সচেতন করেছি এবং মানুষকে অনুরোধ করেছি বাড়িতে থাকতে। এই দুটো উপায় মানলে আমার বিধানসভা খুব তাড়াতাড়ি গ্রীন জোনে চলে যাবে। গ্রীন জোন হলে আর কোন ভয়ের কারণ থাকবে না।
আমার এই বিধানসভায় যেমন দুঃস্থ ভবঘুরে মানুষ আছেন, তেমনিই অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা মানুষ আছে, আছেন অনেক প্রতিবন্ধী মানুষ যারা এই লকডাউনের মধ্যে বাজারে গিয়ে সবজি বা মাছ কিনে রান্না করে খেতে পারছেন না। ৫টা পঞ্চায়েত ও পৌরসভার ১৭টা ওয়ার্ডে এই ধরনের মানুষের জন্য “নগর লক্ষ্মী” চালু করা হয়েছে।এই প্রকল্পের জন্য এই সব মানুষদের খাদ্যাভাবে জীবনযাপন করতে হবে না। এব্যাপারে সোনারপুর উৎসব কমিটির সহযোগিতা খুবই প্রশংসনীয়। তাদের সহযোগিতার জন্য আজ এই প্রকল্প সাফল্য পেয়েছে। “নগর লক্ষ্মী” নিয়ে রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার সি আই সি নজরুল আলি মন্ডল জানান, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী বারেবারে বলেছেন তাঁর রাজ্যের কোন মানুষকে অভুক্ত থাকতে হবে না তাই আমরাও সিদ্ধান্ত নিয়েছি সমাজের এই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা।সূচনার দিন ২০০০ মানুষকে এই স্বাস্থ্য সম্মত ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাইজিনিক পদ্ধতিতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ করে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আগামীদিনে এই সংখ্যাটা আরও বাড়বে। এই কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছেন তৃণমূল দলের সমস্ত শাখা সংগঠনের কর্মীরা।
প্রথমদিন “নগর লক্ষ্মী” যাত্রার সূচনা করেন নজরুল আলি মন্ডল, সোনারপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রবীর সরকার, জেলা পরিষদের সদস্য রঞ্জন বৈদ্য, তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি পাপাই দত্ত, জয়হিন্দ বাহিনীর সভাপতি বিশ্বজিত দাস, পিন্টু দেবনাথ, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি সমরজিত ব্যানার্জি সহ অনেকে।