ইউনিসেফের সহযোগিতায় রাজ্যের প্রান্তিক জেলা পুরুলিয়ায় ৯১.২ এফ এম প্রান্তিক মানুষদের বলতে শিখিয়েছে
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ২রা ফেব্রুয়ারি ২০২০ : ডিজিটাল ইন্ডিয়ার আড়ালে আজও এক গ্রামীণ ভারত লুকিয়ে আছে এই রাজ্যে।শহুরে প্রগতির পাশে দেশের ভূমিপুত্ররা আজও অনেকটা বেমানান। সরকারি পরিসংখ্যানে ও বিজ্ঞাপনে আদিবাসী অধ্যুষিত জেলাগুলি হরিজন পংক্তিতে। যতই তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে সরকারি স্বীকৃতির সীল মোহর লাগুক তাহলেও তাঁরা আজও বঞ্চিত। কিছু মানুষ আছেন যারা দেশের মূল স্রোতের স্পন্দনকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চান। রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত এমনই এক জেলা পুরুলিয়া।রাজ্যে ভাষা আন্দোলনের চর্চা আছে কিন্তু পুরুলিয়ার মালভূমে ৮৭% বাঙালি ১৯৩১ সালে এই বাংলা ভাষার আন্দোলন করেছিলেন সেই কথা আজ কেউ জানেনা। গণদাবিতে ১৯৫৬ সালে ১লা নভেম্বর এই পুরুলিয়া জেলা বাংলায় অন্তর্ভুক্তি হয়।
পুরুলিয়ায় আদিবাসীদের দুটি গোষ্ঠী উল্লেখনীয়। সাঁওতাল এবং করমালি।এদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি আছে। ক্ষয়িষ্ণু জাতি হিসেবে ক্রমশ আদিবাসীদের অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে।
এই পরিস্থিতিতে সরকারি সহযোগিতা নিয়ে কিছু বেসরকারি সমাজসেবী সংস্থা এগিয়ে এসেছেন ।বিশ্বজনীন সমাজ নির্মাণে আন্তর্জাতিক স্তরে একমাত্র নাম ইউনিসেফ ভারতের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে বিভিন্ন প্রকল্পে অংশ নেয়। সাম্প্রতিক কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে এমনই এক অনুষ্ঠানে আদিবাসীদের মূল সমাজের সঙ্গে জুড়তে কমিউনিটি রেডিওর গুরুত্ব সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়।এই রেডিও পরিষেবার মধ্য দিয়ে পুরুলিয়ার আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে আধুনিক সমাজের প্রয়োজনীয় তথ্য তুলে ধরা হয়। সঙ্গে কৃষিবিকাশের উপযোগী তথ্য, আবহাওয়ার খবর পাশাপাশি আদিবাসী সংস্কৃতিকে ব্যবহারিক জীবনের অঙ্গ করে তুলতে অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়।
প্রতিদিন বর্তমানে ১৬ ঘন্টা রেডিও সম্প্রচারের ব্যবস্থা রয়েছে। ডিজিটাল ভারতের এমন অনেক গ্রাম আছে যেখানে ইন্টারনেট, বিদ্যুৎ এখনও পৌঁছোয়নি। সেক্ষেত্রে ব্যাটারি চালিত কমিউনিটি রেডিওর জনপ্রিয়তা ক্রমবর্ধমান। পশ্চিমবঙ্গও এই তালিকায় আছে।অনুষ্ঠানে বিস্তারিত জানালেন ইউনিসেফের পশ্চিমবঙ্গের প্রধান সচিব মহম্মদ মহিউদ্দিন। এই কর্মযজ্ঞে সহযোগিতা করছে আনন্দ আশ্রম নিত্যানন্দ ট্রাস্ট। এই কর্মযজ্ঞের শুরু ২০১০ সালে। ইতিমধ্যে প্রায় পাঁচশ ঘণ্টার অনুষ্ঠান কমিউনিটি রেডিওতে প্রচারের জন্য অনুষ্ঠান নির্মিত হয়েছে। অনুষ্ঠান সৃষ্টিতে আদিবাসীরা নিজেরাই অংশ নেন। শিক্ষার অভাবে এবং প্রাচীন সামাজিক ক্ষতিকর রীতিনীতি থেকে আদিবাসী সমাজকে মুক্ত চিন্তার মানুষ করে তুলতে তাঁদের সঙ্গে মিশতে হবে।জাতির অস্তিত্বরক্ষার প্রয়োজনে রীতিনীতি ত্যাগ করার কথা আদিবাসী সমাজ বুঝতে শিখছে।ইউনিসেফের পক্ষে মৌমিতা দস্তিদার সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, কমিউনিটি রেডিওর পরিধি অনেক বেড়েছে।
কম্পিউটার ও মোবাইল ফোনেও শোনা যাচ্ছে এই কমিউনিটি রেডিওর অনুষ্ঠান। এই উদ্যোগ ধীরে ধীরে রাজ্যের আদিবাসী অধ্যুষিত প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে পৌঁছে যাবে তার একটা রেখাচিত্র ফুটে উঠলো।এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইউনিসেফের কমুনিকেশন ফর ডেভলপমেন্ট স্পেশালিস্ট নাসির আতিক, ‘মান্ট’ এর ডিরেক্টর ডঃ নির্মাল্য মুখার্জী, আহমেদাবাদের ‘দৃষ্টি’ সংস্থার ডিরেক্টর দেবারুন দত্ত এবং উপস্থিত আধিকারীকরা। কমিউনিটি রেডিওর ভলান্টিয়াররা তাদের রেডিও সম্পর্কে কর্মক্ষেত্রে নানা সুবিধা ও অসুবিধার কথা উপস্থিত সাংবাদিক ও বাইরের রাজ্যের প্রতিনিধিদের সামনে তুলে ধরেন। এই সাংবাদিক সম্মেলনে এই রেডিও স্টেশনের উপর একটি পুস্তিকা প্রকাশিত হয়। এছাড়া এই রেডিও স্টেশনের উপর একটি সুন্দর তথ্য চিত্র দেখানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে তাদের ইউনিসেফের সহযোগিতার কথা উল্লেখ করেন এবং কাজের ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতার কথাও তুলে ধরেন। প্রচারে লঞ্চার্স।