রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের পৌরমাতার ব্যর্থতার কারণে মাথাচাড়া দিয়েছে আনন্দমার্গী গোষ্ঠী, সুবিধায় বিজেপি
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, সোনারপুর, ১৬ই ফেব্রুয়ারি ২০২০ : রাজপুর সোনারপুর পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ড প্রায় গত পাঁচ বছর ধরে বেশ চর্চিত। এই ওয়ার্ডের পৌরমাতা দীপালি নস্কর তৃণমূলের টিকিটে দুবারের জয়ী প্রার্থী হলেও এলাকার মানুষ তাকে নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে। মানুষের ক্ষোভের কারণ একটাই উন্নয়ন ও জনসংযোগ। দলীয় স্তরেও পৌরমাতা ও তাঁর স্বামীকে ঘিরে রয়েছে একগুচ্ছ অভিযোগ। দলীয় স্তরের ক্ষোভের কারণ পৌরমাতা ও তাঁর স্বামী শান্তনু নস্কর (ওয়ার্ড সম্পাদক) দলীয় কোন কর্মসূচীতে উপস্থিত থাকেন না উপরন্তু দলীয় কর্মসূচীতে কোনরকম সহযোগিতাও করেন না বরং বাধা সৃষ্টি করেন যাতে দলীয় কর্মসূচী সফলভাবে না করা যায়। এছাড়া বিগত ১০ বছরের এই পৌরমাতাকে পৌরসভা কার্যালয়ে একদিনের জন্য দেখা যায় নি, মানুষকে পরিষেবা দেওয়া দূরস্থ, ওয়ার্ডের উন্নয়নের ব্যাপারে তাঁর কোন ভূমিকা সেভাবে নেই। এমনকি গত লোকসভা নির্বাচনী প্রচারেও ওয়ার্ডে প্রচারসভাতেও পৌরমাতা ও তাঁর স্বামীকে দেখা যায় নি। যেখানে লোকসভা নির্বাচনের সময় তৃণমূল প্রার্থী মিমি চক্রবর্তী প্রচারে উপস্থিত সেখানে ৬ নং ওয়ার্ডের পৌরমাতা ও তাঁর স্বামী সামনেই আসেন নি। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ কোন সরকারি পরিষেবার সুবিধা নিতে পৌরমাতাকে বাড়িতে গিয়ে ধরতে হয়, কিন্তু সেখানেও সমস্যা। তিনি কলেজে যান বলে কোন শংসাপত্র সময়মত পাওয়া যায় না। পৌরমাতার অনুপস্থিতিতে তাঁর স্বামীকে চাওয়া হলে তিনিও কোনরকম সহযোগিতা করেন না ওয়ার্ডবাসীদের সাথে। এসবের কারণে গত পৌর নির্বাচনে কর্মী সভাতে দলীয় কর্মীরা ক্ষোভ উগড়ে দেওয়ায় বেশ বাকবিতন্ডা হয় শান্তনু ও দলীয় কর্মীদের মধ্যে।বিধায়কের উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার মত অবস্থা হয়ে যায়।অবশেষে বিধায়কের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। গতবার কর্মীরা ও ওয়ার্ডের অনেকে তাকে আর তৃণমূল প্রার্থী হিসাবে দেখতে চান নি। কিন্তু দলীয় স্তরের উচ্চ নেতৃত্বকে ধরে বেঁধে নিজের স্ত্রী-র টিকিট নিশ্চিত করেছিলেন। যদিও সেই সময় সাংসদ ছিলেন সুগত বসু, যিনি নিজেও একপ্রকারের একই রকমের। তাকেও পাঁচ বছরে কেউ যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রে দেখেন নি। কোন সেরকম উন্নয়নও দেখা যায় নি। কিন্তু এবার তো আর তিনি নেই, তবে উপায়? ইতিমধ্যে পৌরমাতার স্বামী শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন মহলে গলা চড়িয়ে বলে বেড়াচ্ছেন তাঁর টিকিট কে আটকায় তিনি দেখে নেবেন। কিন্তু ভোট তো আর তিনি একা সকলের হয়ে দেবেন না, ভোট তো মানুষকেই দিতে হবে।দলীয় সূত্রে খবর এবছর এই ওয়ার্ডে আর তৃণমূলের টিকিট পাচ্ছেন না দিপালী নস্কর।প্রথমবার সংরক্ষনের দোহাই দিয়ে পেয়ে গেছেন, পরেরবার সাধারণ ছিল বলে হয়েছে কিন্তু এবার ওয়ার্ড মহিলা (সাধারণ ) হয়েছে।এবার দল প্রার্থী পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে খবর। এছাড়া পিকে মানে আই প্যাকের কাছেও তাঁর বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ জমা পড়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। দলও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেশ কিছু জায়গায় নতুন মুখ দেবে।
এমন খবর হতেই ঘোলা জ্বলে মাছ ধরতে নেমে পড়েছেন ওয়ার্ডের অন্য একজন।এখন তাকে দিপালী নস্করের স্বামীর নিজস্ব বেশ কিছু অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে। তবে যিনি ঘুরছেন তিনি যে টিকিট আদায় করতে পারবেন তেমনটা নয়। কিন্তু এমনটাও হতে পারে শান্তনু উপায় না দেখে তাকে টিকিট করিয়ে দিয়ে লাগাম নিজের হাতে রাখতে চাইছে। ওয়ার্ডে বহু মানুষ সাম্প্রতিক এই ওয়ার্ডে হয়ে যাওয়া সরকারি সবলা মেলায় এসে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন বিধায়ক ও সাংসদের স্টলে। এই মেলায় রাজ্যের মন্ত্রী থেকে জেলা পরিষদের বহু কর্মাধ্যক্ষ উপস্থিত ছিলেন, উপস্থিত ছিলেন এই জেলার দু-জন সাংসদ কিন্তু তাতেও ওয়ার্ডের তরফে কাউকে দেখা যায় নি। এটা একপ্রকার দলে থেকে দলের বিরোধিতা করা বলা যেতে পারে। পৌরমাতা দীপালি নস্কর ও তাঁর স্বামী শান্তনু সংগঠনও সেভাবে দেখভাল করেন না।
আর সেই সুযোগে এই ওয়ার্ডে মাথা চাড়া দিয়েছে আনন্দমার্গী গোষ্ঠী। আজ হঠাৎ দেখা গেল বালিয়া নফর চন্দ্র স্কুলের গলিতে একটি ফ্ল্যাট থেকে আনন্দমার্গীর উদ্যোগে পদযাত্রা করা হয়।প্রায় গোটা ওয়ার্ড পরিক্রমা করে এই পদযাত্রা। সুযোগ বুঝে ঝোপে কি তবে কোপ মারতে চাইছে আনন্দমার্গী গোষ্ঠী? ওয়ার্ডের অনেকের মনে এই প্রশ্ন দানা বাঁধছে? যেভাবেই হোক নস্কর পরিবারের কাউকে বা শান্তনুর পরিচিত কাউকে এবার টিকিট দিলে মানুষ বিরোধিতা করবে, প্রয়োজনে বিজেপিকে জয়ী করবে কিন্তু শান্তনুকে আর নয় বলে অধিকাংশ মানুষের মতামত।গত লোকসভা নির্বাচনে পৌরমাতা ও তাঁর স্বামী যিনি ওয়ার্ডের সম্পাদক প্রচারে কোনরকম সহযোগিতা না করলেও ওয়ার্ডের সভাপতি শ্রীমন্ত নস্করের ঐকান্তিক চেষ্টায় দফায় দফায় পাড়া বৈঠক, নিজের উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার পর্বের মাধ্যমে তৃণমূল ওয়ার্ড থেকে জয় আটুট রাখেছে।কিন্তু শান্তনুর ঘনিষ্টদের মুখে শোনা গেছে রাতের অন্ধকারে শান্তনু বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার করেছে, এদিকে ভোটার স্লিপ হাতে ছিল না কারণ ভোটার স্লিপ নিতে তিনি বিধায়কের দপ্তরে যান নি।এখন ওয়ার্ডের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে দলের সিদ্ধান্তের উপর, মানুষ এখন তাঁরই অপেক্ষায়। শোনা যাচ্ছে এবার বিজেপির তরফে স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব স্বপন সিনহার কন্যা বিজেপির টিকিটে এই ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হতে চলেছেন যদিও এখনো কোন দলই তাদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে নি।