বাবার শেষ ইচ্ছা জানালেন প্রয়াত কমরেড শ্যামল চক্রবর্তী কন্যা উষশী
অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ৮ই আগস্ট ২০২০ : সিপিএমের বর্ষীয়ান নেতা ও রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী শ্যামল চক্রবর্তী শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ ক্রেছেন।কোভিডে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত নেতার ইচ্ছা অনুযায়ী শেষকৃত্য সম্পন্ন আর করা হল না।এব্যাপারে প্রয়াত বামপন্থী নেতার কন্যা উষশী জানান, বাবার শেষ ইচ্ছে ছিল একটাই। তাঁর দেহ যাতে দাহ করা না হয়। মিছিল করে যেন নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতাল থেকে। প্রিয় কমরেড অনিল বিশ্বাসের মত যেন চিকিৎসকা বিজ্ঞানের স্বার্থে দান করা হয় মরদেহ। শতরূপ আর বিপুলদাকে বারবার করে বলে রেখেছিলেন ‘আমার মেয়ে যদি অন্য কিছু বলে তোমরা শুনবে না। দাহ করবে না। সোজা মেডিকেল কলেজ নিয়ে যাবে” আমার ‘অন্য কিছু’ বলার প্রশ্ন ছিল না। আমি জানতাম গোটা কলকাতায় মিছিল করে, ইন্টারন্যাশানাল গান গাইতে গাইতে কোনও একদিন আমরা বাবাকে মহা সমারোহে মেডিকেল কলেজ নিয়ে যাব অন্তিম যাত্রায়। কিন্তু কোভিড তা হতে দিল না। দিল না ঠিকই কিন্তু কতগুলো প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল। মৃতদেহে একটি ভাইরাস সত্যিই কতক্ষণ বাঁচতে পারে এই নিয়ে নির্দিষ্ট কোনও তথ্য কি আছে? চিকিৎসা বিজ্ঞানে কি এই নিয়ে কোনও গবেষণা হয়েছে? যদি না হয়ে থাকে করা হোক। এমন যদি প্রমাণ হয় মৃতদেহে কয়েক ঘন্টা বা কয়েক মুহুর্তের পরে ভাইরাস আর বেঁচে থাকতে পারে না, তাহলে সেই সময়টুকু মৃতদেহ হাসপাতালে সংরক্ষিত রেখে, দরকার হয় প্যাকিং করেই তা তুলে দেওয়া হোক পরিবারের হাতে। সচেতনতা থাকুক । মাস্ক থাকুক।স্যানিটাইজারও থাক।কিন্তু অযথা প্যানিক বন্ধ হোক ।
অনেকেই জানতে চাইছেন বাবাকে কি ভাবে মনে রাখব! আমি মনে রাখব একজন লড়াকু মানুষ হিসেবে। কল্লোল নাটক দেখতে দেখতে যিনি আমায় ফিসফিস করে বলেছিলেন ‘লড়াইটাই আসল। প্রতিরোধ টাই জরুরী। জেতা-হারাটা নয়’। আর মনে রাখব যেকোনও প্রতিকুলতার মধ্যেও ওঁর মনের জোর না হারানোর ‘ম্যাজিকাল’ ক্ষমতার কথা। আর মনে রাখব ‘পার্টি হোল্টাইমার’ হিসেবে ওঁর নিজস্ব গর্বের কথা।
কখনও বিধায়ক, কখনও মন্ত্রী কখনও বা সাংসদ- ওঁর অনেক পরিচয় ছিল। কিন্তু লোকের কাছে আমাদের সে সব বলার যো ছিল না। ‘বাবা কি করেন’ জানতে চাইলে বলতে হত একটাই কথা। ‘বাবা পার্টির সর্বক্ষণের কর্মী। পার্টি হোল্টাইমার। আমরা হোল্টাইমার পরিবার’। ব্যাস আর কিচ্ছু না। আমার মা সক্রিয় রাজনীতি করার সঙ্গে সঙ্গে চাকরি করতেন। মা মারা যাওয়ার পর তাই আমাদের বেশ অনটনেই পড়তে হয়েছিল। সেই সময়ে সাড়ে আট টাকা মাইনে (প্লাস ৫ টাকা টিফিনের) দিয়ে কি ভাবে লেখাপড়া শিখে শেষ অবধি বি এ, এম এ পাশ দিলাম সে কাহিনী আজকাল অনেকেরই রূপকথার মত শোনাবে। কিন্তু আমরা বাবা-মেয়ে খুব সহজেই এই জীবন মেনে নিয়েছিলাম। অনমনীয় মনের জোর। মানুষের জন্য কিছু করার আকাঙ্ক্ষা আর ক্ষমতার শীর্ষে থেকেও সৎ থেকে যাওয়ার জাদুমন্ত্র। আশাকরি এই সবের জন্যই উনি পরের প্রজন্মের সর্ব্বক্ষণের কর্মীদের কাছে উনি উদাহরণ হিসেবে থেকে যাবেন। যে মিছিল বাবা এত ভালবাসতেন সেই মিছিল করে বাবাকে বিদায় আমরা দিতে পারিনি ঠিকই কিন্তু সান্তনা একটাই – কিন্তু এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বাবার প্রিয়তম লাল পতাকায় তাঁকে মুড়ে দিয়েছেন বাবার কমরেডরা। আর আমরা সবাই গাইতে পেরেছি বাবার প্রিয়তম গান ‘শেষ যুদ্ধ শুরু আজ কমরেড । এস মোরা মিলি এক সাথে।গাও ইন্টারন্যাশানাল । মিলাও মানবজাত’ লাল সেলাম কমরেড শ্যামল চক্রবর্তী । মাঠে, ময়দানে, কলে, কারখানায়, মিছিলে স্লোগানে লড়াই জারি থাকবে।