তথ্য রহস্য

মালদা, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া ১৮ই আগস্ট ১৯৪৭ স্বাধীনতা লাভ করে, শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি চেয়েছিলেন বাংলা ভাগ

অম্বর ভট্টাচার্য, এবিপিতকমা, কলকাতা, ১৯শে আগস্ট ২০১৯ : ইংরেজ শাসনের সময় ব্রিটিশরা চেয়েছিল ভারত ভগ হোক আর তার থেকে বেশি চেয়েছিল সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবার যিনি স্বপ্ন দেখছেন সেই জওহরলাল নেহেরু। কিন্তু স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই বাংলাকে ভাগ করার চক্রান্ত করেছিল ব্রিটিশরা কারণ সেই সময় স্বাধীনতা আন্দোলনে দুই বাংলা এক ছিল আর সেই আন্দোলন ছিল ইংরেজদের কাছে খুবই ভয়ঙ্কর। সেই আন্দোলনকে সামাল দিতে ইংরেজরা হিমশিম খাচ্ছে। একটাই রাস্তা বাংলা ভাগ হলে আন্দোলনের ধার কমে যাবে। ১৯৪৭ সালের ২০শে জুন বিধানসভায় বাংলার সদস্যরা তিন মতের ভিত্তিতে ভোট প্রদান করেন।

  • In the joint session of the house, composed of all the members of the Assembly, the division of the joint session of the House stood at 126 votes against and 90 votes for joining the existing Constituent Assembly (i.e., India)
  • Then the members of the Muslim-majority areas of Bengal in a separate session passed a motion by 106–35 votes against partitioning Bengal and instead joining a new Constituent Assembly (i.e., Pakistan) as a whole.
  • This was followed by the separate meeting of the members of the non-Muslim-majority areas of Bengal who by a division of 58–21 voted for partition of the province.। সেই সময় থেকেই এখানে হিন্দু মুসলিমের মধ্যে একটা বিভেদ ছিল যা আজও আছে। তবে সেই সময় মুসলিমরা কিন্তু বাংলা ভাগের পক্ষে ছিলেন না বরং হিন্দুরাই বাংলা ভাগ চেয়েছিল।শুধুমাত্র তৎকালীন গভর্নর মাউন্ট ব্যাটন একাই দায়িত্ব নিয়ে সিধান্ত নেন বাংলা ভাগের।সিধান্ত হয় পশ্চিমবাংলা থাকবে ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়ার অন্তর্গত আর পূর্ব বাংলা থাকবে ডমিনিয়ন অফ পাকিস্থান, মানে পাকিস্থান শাসিত রাজ্য হিসাবে থাকবে পূর্ব বাংলা। অবশেষে যখন আবার বিবেচনার সময় এল তখন ৭ই জুলাই সিলেট সিধান্ত নেয় তারা পাকিস্তানে থাকবে।ইংরেজরা চেয়েছিল ধর্মকে সামনে রেখে বাংলাকে ভাগ করতে। তৎকালীন বাংলার বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল মুসলিম লীগ নেতা সুরাহওয়ার্দি খুব ভাবনা চিন্তা করে সিধান্ত নেন যে এভাবে বাংলা ভাগ হলে পূর্ব বাংলার চরম ভোগান্তি হবে।কারণ পশ্চিমবাংলাতে কয়লা খনি থেকে পাট শিল্প এবং অন্যান্য শিল্প থেকে যাবে এবং সব থেকে বড় বন্দরটা কলকাতাতেই থাকবে। তাই তিনি চেয়েছিলেন বাংলা একটা স্বতন্ত্র রাজ্য হিসাবে গন্য হোক।এই মতাদর্শ নিয়ে তিনি ২৪শে এপ্রিল ১৯৪৭ সালে দিল্লিতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর ভাবনা প্রকাশ করেন।তাঁর মত প্রকাশের পর থেকে বিরোধিতা শুরু হয়। বর্ধমান লীগের নেতা আবুল হাসিম তাকে সমর্থন করলেও নরুল আমিন ও মহঃ আক্রাম খান (যিনি একজন প্রতিষ্ঠিত সাংবাদিক ও বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্রের সম্পাদক) বিরোধিতা করেন। কিন্তু জিন্না সুরাহওয়ার্দি-র সিধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে সমর্থন করেন। এরপর সুরাহওয়ার্দি তাঁর পক্ষে সমর্থন জোগাড় করতে মাঠে নেমে পড়েন। কংগ্রেসের তরফে গুটিকয়েক নেতা এই সিধান্তকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। বাংলায় শরৎ চন্দ্র বসু ও কিরণ শঙ্কর রায় সমর্থন জানালেও কংগ্রেসের উচ্চ নেতৃত্ব নেহেরু ও প্যাটেল সমর্থন করেন নি। সেই সময় হিন্দু ন্যাশালিস্ট পার্টি বা হিন্দু মহাসভার নেতা শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি সমর্থন করেন নি সুরাহওয়ার্দিকে। তারা মনে করেছিল সুরাহওয়ার্দি তাঁর এই সিধান্তের মধ্যে দিয়ে মুসলিম লীগের শাসনে রাখতে চায় গোটা বাংলাকে কারণ উন্নয়ন পশ্চিম বাংলা দিয়েই করতে হবে।
  • https://www.youtube.com/watch?v=HoCUZkTaU9c&t=5s
  • যদিও তারা বাংলাকে একটা স্বাধীন রাষ্ট্র করার কথা বলেছে যার পরিনাম হিন্দুরা সংখ্যালঘু হবে আর মুসলিমরা সংখ্যাগুরু হবে। তারাই শাসন করবে এই স্বাধীন রাষ্ট্র। শরৎ চন্দ্র বসু ও সুরাহওয়ার্দির মধ্যে দীর্ঘ আলোচনা হয়। শরৎ চন্দ্র বসু মনে করেন যদি বাংলা ভাগ হয় তবে হিন্দু জনসংখ্যার একটা বড় অংশ থেকে যাবে পূর্ব পাকিস্থানে, এটা হিন্দুদের পক্ষে নিরাপদ হবে না। যদি ভাগ হতেই হয় তবে রাজনৈতিক মতাদর্শে ভাগ হোক। প্রশ্ন ওঠে ১৯৪৬ সালের হিন্দুদের উপর যে অকথ্য অত্যাচার চালায় মুসলমানেরা সেই বিষয়। শরৎ চন্দ্র বসু জানান তাঁর সরকারের উপর মানুষের বিশেষ করে হিন্দুদের আস্থা নেই কারণ তারা মনে করে এটা পরিকল্পনা মাফিক ঘটানো হয়েছিল। এছাড়া ভোটাধিকার নিয়েও প্রশ্ন ওঠে।সুরাহওয়ার্দি দুটো আলাদা নির্বাচন হবে, হিন্দুদের আলাদা ও মুসলমানদের আলাদা। এখানেই মতের পার্থক্য হতে শরৎ চন্দ্র বসু পিছিয়ে এলেন। কংগ্রেসও চায়ছিল না বাংলা একটা আলাদা রাজ্য হিসাবে চিহ্নিত হোক। একসময় গোটা বাংলার শেষ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এইচ এস সুরাহওয়ার্দি। অবশেষে বাংলা ভাগ হল তার রাজনৈতিক ও ধর্মিয় প্রেক্ষাপটে। এই তিন জেলার স্বাধীনতার ইতিহাসের পাতা ওল্টালে দেখা যায় , ১৯৪৭ এর আগস্ট মাঝামাঝি যখন সারা ভারতবর্ষ স্বাধীনতার আবেগে ভাসতে শুরু করেছে।তখন এই তিন জেলার মানুষের চিত্রটা একেবারেই বিপরীত।১৯৪৭ এর ১৩ অগাস্ট ঘোষণা করা হয় জেলার ১৬টি থানা তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে।ফলে পরদিন ১৪ অগাস্ট জেলা কালেকটরেট ও মুসলিম ইন্সটিটিউটে তোলা হয় স্বাধীন পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা।সেই সময় যেভাবে ভারত ভাগ হয়েছিল তা হল এরকম
  • Muslims majority districts: Dinajpur, Rangpur, Malda, Murshidabad, Rajshahi, Bogra, Pabna, Mymensingh, Jessore, Nadia, Faridpur, Dhaka, Tippera, Bakerganj, Noakhali and Chittagong.
    Non-Muslim majority Districts: Calcutta, Howrah, Hooghly, Birbhum, Burdwan, Bankura, Midnapore, Jalpaiguri, Darjeeling, 24 Pargana, Khulna and Chittagong Track hills. সেই সময় মালদা, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া ছিল পূর্ব বাংলায় এবং খুলনা ও চাটগাঁ ছিল পশ্চিম বাংলায়।১৫ই আগস্টের দিন এভাবেই স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়। ১৪ই আগস্ট মালদা, মুর্শিদাবাদ ও নদিয়া পাকিস্থানের পতাকা তুলে স্বাধীনতা দিবস পালন করে এবং খুলনা ও চাটগাঁ ভারতের জাতীয় পতাকা তুলে স্বাধীন ভারতের স্বাধীনতা দিবস পালন করে। তা দেখে গর্জে ওঠেন তিন জেলাবাসী।নতুন বিদ্রোহ দানা বাঁধতে শুরু করে দিয়েছিল এই তিন জেলাবাসীর মনে।এক অদ্ভুত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো জেলা জুড়ে।এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি তিন জেলার মানুষ।জেলার গণমান্য ব্যক্তিরা ছুটে যান কলকাতায়।১৫ ই আগস্ট ভারত স্বাধীন হয়ে গিয়েছে।সারা দেশে যখন উল্লাস তখনও তিন জেলার আকাশে উড়ছে পাকিস্থানের জাতীয় পতাকা। এখানেও এল বিপত্তি। অবশেষে ফের বাংলা ভাগ নয় এবার ভারত ভাগ নিয়ে ফের আলোচনা হয়ে মূল ভাগের সিধান্ত হয়
  • Pakistan: East Dinajpur, Rangpur, Rajshahi, Bogra, Pabna, Mymensingh, Sylhet (except Barak valley), Khulna, Bakerganj, Tippera, Noakhali, Chittagong, Jessore, East Nadia, Chittagong Track Hills.
    India: West Dinajpur, Jalpaiguri, Darjeeling, Malda, Murshidabad, West Nadia, Calcutta, 24 Pargana, Burdwan, Birbhum, Midnapore, Howrah, Hooghly and Barak Valley in Assam. ১৭ আগস্ট রাতে রেডিওতে ঘোষণা করা হয় তৎকালীন মালদা জেলার ১৬ টি থানার মধ্যে পাঁচটি থানা অর্থাৎ নাচোল, ভোলাহাট, গোমেস্তাপুর, শিবগঞ্জ ও নবাবগঞ্জ থানাকে পূর্ব পাকিস্তানে রাখা হচ্ছে। বাকি ১১ টি থানাকে স্বাধীন ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।১৮ ই আগস্ট পাকিস্থানের পতাকা নামিয়ে মালদার আকাশে তোলা হয় স্বাধীন ভারতের তেরঙ্গা। সেইসময় মালদা জেলা কালেকটোরিতে ভারতীয় জাতীয় পতাকা উত্তলন করতে আসে তৎকালীন পাবনা জেলার অতিরিক্ত জেলা শাসক মঙ্গল আচার্য।এই ভাবেই নতুন করে স্বাধীনতা লাভ করে এই তিন জেলা।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *