You cannot copy content of this page. This is the right with takmaa only

“ইস্টবেঙ্গল জিতসে”- এটাই ছিল সচিনদেবের শেষ কথা

বিশেষ প্রতিবেদক, তকমা নিউজ, কলকাতা, ১লা নভেম্বর ২০২৩ : একবার কৃষ্ণচন্দ্র দে নিয়ে এসে হাজির হলেন এক ছিপছিপে তরুণকে। এ নাকি ভাল গায়। কিন্তু কেউ এর জন্য গান লিখতে রাজি না। হেমেন্দ্রকুমার রায় গান শুনলেন। মুগ্ধ হলেন। রাজি হলেন গান লিখতে। চণ্ডীচরণ সাহা তখন নতুন রেকর্ডিং কোম্পানি খুলেছেন। হিন্দুস্থান মিউজিক্যাল প্রোডাক্টস। সেখান থেকেই প্রথম রেকর্ড বেরল ছেলেটির । লোকগান ‘ডাকলে কোকিল রোজ বিহানে’। গীতিকার হেমেন্দ্রকুমার রায়। সুরকার সে নিজেই। ছেলেটির নাম শচীন। শচীন দেববর্মন।

হিন্দি সিনেমায় গাইতে গিয়েই বিপত্তি। ইয়াহুদি কি লেড়কির সব গান রেকর্ডের পরেও সুরকার জানালেন এই “নাকি” গলা চলবে না। ফলে তিনি বাদ। ভাবলেন সুরকার হবেন। কেউ তার সুরে গান গাইতে চায় না। শেষে সামসেদ বেগমের হাতেপায়ে ধরলেন। কিছু গানে সুর দিয়েছেন। কিন্তু সে সব গান প্রযোজক তখনই নেবেন, যদি সেই গান সামসেদের গলায় হয়। আসলে প্রযোজক ভেবেছিলেন সামসেদ ভাগিয়ে দেবেন তাঁকে। কিন্তু তিনি এক কথায় রাজি। গাইলেন “কুছ রঙ বদল রহি হ্যায়”। কে জানত কয়েক বছর পরে এই তরুণের সুরে তাঁর গাওয়া “ সইয়াঁ দিল মে আনা রে” ছমছমিয়ে, বৈজয়ন্তিমালার লাস্য নিয়ে সামসেদের সিগনেচার সং হয়ে উঠবে!

পরেও কত নতুনদের সুযোগ দিয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই। কিশোরের গল্প তো সবাই জানি। কী জানি তরুণ কাইফি আজমির মধ্যে কী দেখেছিলেন শচীন কত্তা। গুরু দত্তের জীবনের সবচেয়ে ডার্ক ছবি “কাগজ কে ফুল” তৈরি হচ্ছে। সেই ছবির সবচেয়ে ইন্টেনস এক দৃশ্য এগিয়ে চলবে শুধু গানে। একেবারে আনকোরা কাইফিকে সে গান লেখার দায়িত্ব দিলেন বর্মন সাহেব। আর কী গানই না লিখলেন কাইফি। প্রায় অন্ধকার স্টুডিও, স্পট লাইট আর গীতা দত্তের মাদকতাভরা গলায় গাওয়া “ওয়ক্ত নে কিয়া কেয়া হাসিন সিতম” ভারতীয় ছবির অন্যতম সেরা কাল্ট গান হয়ে রয়েছে আজও। জীবনের শেষ দিকে কাইফি নিজেও স্বীকার করেছিলেন, এই একটা গানের জন্য তিনি গর্ববোধ করবেন চিরকাল। গান কাল্ট হল।

সেদিন মিলি সিনেমার গানের রেকর্ডিং। শচীন কত্তার শরীরের খুব বাড়াবাড়ি।এই যান কি সেই যান। তবু সিনেমার কাজ ফেলে রাখা যাবে না। রিলিজ ডেট এগিয়ে আসছে। যথারীতি ছেলে রাহুল উপস্থিত থেকে তার সুর দেওয়া গান রেকর্ড করালেন।

কিশোর গাইলেন “বড়ি শুনি শুনি হ্যায়/জিন্দেগী ইয়ে জিন্দেগী”…। গান না কান্না? কে জানে! তাঁর কন্ঠের বুক ভাঙা বেদনায় চোখে জল এসে গেছিল স্টুডিয়োর সব্বার। রাহুলের চোখও শুকনো ছিল না।

তার কিছুদিন আগেই ছেলের ওপর চরম অভিমান করেছিলেন বাবা। স্টুডিওতে পঞ্চম সেদিন ‘দম মারো দম’ গান তোলাচ্ছিলেন আশাজিকে | পাশেই ছিলেন কত্তামশাই। দু’লাইন শোনার পরেই রাগে মুখ লাল এস ডি বর্মনের |চেঁচিয়ে উঠে পঞ্চমকে বললেন, ‘আমি এই গান তরে শিখাইছি? মাঠের গান ভুইল্যা, বাংলার গান ভুইল্যা, তুই অবিকল বিদেশি সুর নকল কইরা সুর করস! আমার সব শিক্ষা বৃথা গেল | তুই আমার কুলাঙ্গার ছেলে |’ রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে কর্তা যখন মাথা নিচু করে স্টুডিও বেরিয়ে এলেন, সবার দেখে মনে হলো, রাজা যুদ্ধে হেরে বেরিয়ে যাচ্ছেন |

মিলির রেকর্ড সেরে ফিরে এসে ছেলে দেখলেন বাবার শেষ সময়। প্রায় কোমাচ্ছন্ন। বাবাকে শেষ মূহুর্তের শান্তি দিতে কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন সেই খবর। ৫-০ তে জিতেছে তাঁর প্রিয় দল। মৃদু হাসি ফুটে উঠল কত্তার ঠোঁটের কোণায়. চোখ খুললেন…অস্ফুট স্বরে বললেন…

“ইস্টবেঙ্গল জিতসে”- এটাই ছিল তাঁর শেষ কথা।

১৯৭৫ সালে মাত্র ৬৯ বছর বয়সে চলে গেলেন শচীন দেব বর্মন….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *